আজ জোহানেসবার্গে পিঙ্ক ডে ছিল। গোলাপি রঙের জার্সি পড়ে খেলতে নেমেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। রেকর্ড অক্ষত রেখেছেন তারা। এই জার্সিতে তারা কখনো হারেনি। আর ফেরার প্রয়োজন ছিল। সেটাই তারা করেছে। কেপটাউনে প্রথম ম্যাচে তারা হেরেছে ৩৮ রানে। আজ জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডার্সে ৭ উইকেটে জিতল তারা।
৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ সমতায় রয়েছে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি ২৩ মার্চ সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২টি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশের ব্যাটিং আজ ভাল হয়নি। ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে থেমে যায় তারা। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে (১৯৫/৩,৩৭.২ ওভার)।
কুইন্টন ডি কক ৬২ রান করেন। মিরাজ, সাকিব ও আফিফ ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।
জোহানসবার্গের ওয়ান্ডারার্স ক্রিকেট গ্রাউন্ড রীতিমত ব্যাটিং স্বর্গ। এই ভেন্যুতে একদিনের সংস্করণে চারশ ছাড়ানো সংগ্রহ আছে ৩টি। তিনশ ছাড়ানো ইনিংস আছে সাকুল্য ১৯টি। সেখানেই কীনা টেনেটুনে ১৯৪ রানের সংগ্রহ বাংলাদেশ দলের। ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জিতে আজ (শনিবার) দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিল সফরকারীরা। তবে আত্মবিশ্বাসী দলটাকে টেনে মাটিতে নামাল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের কাছে ৭ উইকেটের বিশাল হারে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল টাইগারদের।
পিংক ডে ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দলের ইনিংসের শুরুটা সুখকর হয়নি। ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পথ হারায় সফরকারীরা। পরে আফিফ হোসেনের অর্ধশতক হাঁকানো ১০৭ বলে ৭২ রানের ইনিংসের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজের ৩৮ রানের কল্যাণে ১৯৪ রানের পুঁজি পায় অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল। ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দাপুটে শুরু পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেনার কুইন্টন ডি ককের ঝড়ো অর্ধশতকে সঙ্গে কাইল ভেরেইনার ফিফটিতে ৭ উইকেট এবং ৭৬ বল হাতে রাখে বিশাল জয় তুলে নিয়েছে প্রোটিয়ারা।
এই জয়ের কল্যাণে আইসিসি সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়ন্ট অর্জন করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। সঙ্গে বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রেখে সিরিজে ১-১ এ সমতা ফেরাল টেম্বা বাভুমার দল। ফলে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে রূপ নিলো। যে ম্যাচটি মাঠে গড়াবে আগামী ২৩ মার্চ।
অসুস্থতার কারণে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ছিলেন না ডি কক। ফিরেই ব্যাট হাতে ধ্বংসলীলা চালান। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি যেন বেছে নিলেন নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার মঞ্চ হিসেবে। পেস কিংবা স্পিন- কোনো আক্রমণেই দমানো যাচ্ছিল না এই ওপেনারকে। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৬ বলে ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি পূরণ করেন তিনি। আরেক ওপেনার মালানকে এক পাশে দর্শক বানিয়ে রেখে ছোটেন স্বেঞ্চুরির পথে।
অবশেষে ইনিংসের ১৩তম ওভারে ব্রেক থ্রু এনেন দেন স্পিনার মিরাজ। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন ইয়ানেমান মালানকে। অফে শাফল করে প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ওপেনার। বলের লাইনে যেতে পারেননি। হয়ে যান বোল্ড। ভাঙে ৭৫ বল স্থায়ী ৮৬ রানের জুটি। খানিক পর ডি কককে ফেরান সাকিব। বাঁহাতি স্পিনারকে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন ডি কক। তবে ডিপ মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন আফিফ। ৪১ বলে ২টি ছক্কা ও ৯ চারের সাহায্যে ৬২ রান করেন ডি কক।
দ্রুত দুই উইকেট হারালেও দলকে চাপে পড়তে দেননি বাভুমা আর ভেরেইনা। দলের হাল ধরে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান দুজন। তবে শেষ দিকে এসে আউট হন অধিনায়ক বাভুমা। স্পিনার আফিফকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানা পার করতে পারেননি। চমৎকার ক্যাচ নেন শরিফুল ইসলাম। ভাঙে ১০১ বল স্থায়ী ৮২ রানের জুটি। ৫২ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৭ রান করেন বাভুমা। এরপর ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন ভেরেইনা। দলকে পাইয়ে দেন ৭ উইকেটের বড় জয়।
ভেরেইনা ৭৭ বলে ৪টি ছয় আর ২ চারে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ডুসেনের ব্যাট থেকে আসে ৩ রান। বাংলাদেশের হয়ে তিন স্পিনার সাকিব, মিরাজ আর আফিফ ৩টি করে উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বাজে হয় বাংলাদেশ দলের। লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমে তৃতীয় ওভারে লুঙ্গি এনগিডির শিকার হয়ে ফেরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ৪ বলে ১ রান করেন তিনি। আগের ম্যাচের নায়ক সাকিব আল হাসান এ ম্যাচে রানের খাতা খুলতে পারলেন না। রাবাদার বাড়তি বাউন্সের বলটি লেগ সাইডে ঘুরানোর চেষ্টা করেন সাকিব। ঠিক মতো খেলতে পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় কাভারে। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা লিটনও ব্যর্থ এদিন। রাবাদাকে উইকেট দিয়ে ১৫ রানে সাজঘরে পথ ধরেন।
দলীয় ২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটিকে টেনে তোলার চেষ্টায় ব্যর্থ মুশফিকুর রহিম আর ইয়াসির আলি রাব্বি। রানের খাতা খোলার আগে একবার জীবন পাওয়া রাব্বি সে জীবনের মূল্য দিতে পারলেন না। রাবাদার লাফিয়ে ওঠা বল খেলতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। ১৪ বলে করেন ২ রান করে আউট তিনি। সতীর্থদের দেখানো পথে হাঁটলেন মুশফিকুর রহিমও। পার্নেলের বলে এলবিডাব্লিউ হন ৩১ বলে ১১ করে।
মুশফিকের আউটের পর ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৬০ রানের পার্টনারশিপ। তবে সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের ২৮তম ওভারের প্রথম বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে লেগ স্লিপে মালানের হাতে ক্যাচ দেন ৪৪ বলে ২৫ রানে। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে জুটি গড়ে অর্ধশত তুলে নেন আফিফ। ৭৯ বলে ৭টি দারুণ চারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান তিনি।
মিরাজও অন্যপ্রান্ত থেকে রান করছিলেন। আফিফ যখন শতকের দিকে এগোচ্ছিলেন তখনই রাবাদার চতুর্থ শিকার হন তিনি। আফিফের ১০৭ বলে ৭২ রানের ইনিংস থামান রাবাদা। সেই ওভারেই মিরাজকে ফিরিয়ে ওয়ানডে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকট নেওয়ার স্বাদ পান রাবাদা। প্রথমবারও এই অর্জন ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। দারুণ খেলতে থাকা মিরাজ থামেন ৪৯ বলে ৩৮ রানে। তাদের বিদায়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর থামে ১৯৪ রানে। রাবাদা ৫টি এবং এনগিদি, শামসি, ডুসেন ১টি করে উইকেট নেন।