ছবি: সংগৃহীত
কার্লো আনচেলত্তিকে কাল ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে দেশটির ফুটবল কনফেডারশন (সিবিএফ)। দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পরপরই আগামী জুনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটি ম্যাচে জন্য দল ঘোষণা করেন আনচেলত্তি।
২৬ সদস্যের সেই স্কোয়াডে কাসেমিরো, রিচার্লিসন ও আন্তোনিকে ফেরানো হলেও নেইমারকে রাখা হয়নি। স্কোয়াড দেখার পর ব্রাজিলের অনেক সমর্থকদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল—দীর্ঘ সময় দলের প্রাণভোমরা হয়ে থাকা নেইমার কি তাহলে আনচেলত্তির পরিকল্পনায় নেই?
কাল সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকেরাও আনচেলত্তিকে এই প্রশ্ন করেছিলেন। ৬৫ বছর বয়সী ইতালিয়ান কোচ যে উত্তর দিয়েছেন, তাতে সমর্থকদের আশ্বস্ত হওয়ারই কথা।
প্রথমবারের মতো ব্রাজিল দল ঘোষণার আগে নাকি নেইমারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন আনচেলত্তি। সান্তোসে ফেরা ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হওয়ারও তাগিদ দিয়েছেন।
দল ঘোষণার পর আনচেলত্তি বলেন, ‘আমি সেসব খেলোয়াড়দের দলে নেওয়ার চেষ্টা করেছি, যারা এই মুহূর্তে (শারীরিক দিক থেকে) ভালো অবস্থায় আছে। নেইমারকে অবশ্যই বিবেচনায় রেখেছি। তবে আমরা তার সেরাটা দেখতে চাইছি। সবাই জানে নেইমার কতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সে বিশ্বকাপে খেলার জন্য ব্রাজিলে ফিরেছে, প্রস্তুতিও নিচ্ছে। আমিও চাই, সে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকুক। বিষয়টি খোলাখুলিভাবে জানাতে আজ (কাল) সকালেই আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি।’
ব্রাজিল ইতিহাসের শীর্ষ গোলদাতা নেইমারকে সর্বশেষ জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা গেছে ২০২৩ সালের অক্টোবরে। উরুগুয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মিডফিল্ডার নিকোলাস দে লা ক্রুজের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে সময় হাঁটুতে আঘাত পেয়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। এতে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে যান। সেরে ওঠার পর ক্লাব ফুটবলে খেলতে গিয়ে আরও কয়েকবার চোটে পড়েন। সম্প্রতি আবারও খেলায় ফিরলেও তাকে দেখে শতভাগ ফিট মনে হয়নি।
নেইমারের মতো কাসেমিরো ও রিচার্লিসনকেও ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর আর ব্রাজিলের জার্সিতে দেখা যায়নি। তবে এ দুজনের না থাকার কারণ চোট নয়। বরং আনচেলত্তির আগের কোচেরা তাদের দল থেকে বাদ দিয়েছিলেন। তবে আনচেলত্তি ব্রাজিল অধ্যায়ের শুরুতেই তাদের ডেকেছেন। এর মধ্য দিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় পর তারা জাতীয় দলে ফিরলেন।
সম্প্রতি টটেনহামের হয়ে উয়েফা ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতেছেন ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন। কাসেমিরোর ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সদ্য সমাপ্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমে ভালো করতে না পারলেও অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারের ফুটবলীয় গুণাবলির ওপর আস্থা রেখেছেন আনচেলত্তি। রিয়াল মাদ্রিদে থাকতে কাসেমিরোকে লম্বা সময় শিষ্য হিসেবেও পেয়েছিলেন এই কোচ। তাই তার সামর্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আছে।
কাসেমিরোকে নিয়ে আনচেলত্তি বলেন, ‘আমার মতে, সে অনেক বড় মাপের খেলোয়াড়। আমি সৌভাগ্যবান যে (রিয়ালে থাকতে) তাকে আমার দলে পেয়েছিলাম। আমার মনে হয়, জাতীয় দলে এমন একজন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন, যার মধ্যে ক্যারিশমা, ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা আছে। ব্রাজিল সব সময়ই অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় পেয়েছে। তবে আধুনিক ফুটবলে শুধু প্রতিভা নয়; মানসিকতা, প্রতিশ্রুতি, ত্যাগ—এসবও দরকার। কাসেমিরোর মধ্যে সেসব আছে। দলে আরও যাদের ডাকা হয়েছে, তাদের অনেকের মধ্যেও এই গুণগুলো আছে।’
২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিক ফুটবলে সোনা জেতার পর আর কোনো বড় সাফল্য নেই ব্রাজিলের। লম্বা সময় ধরে দলটি কেন প্রত্যাশিত ফল পাচ্ছে না, এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন আনচেলত্তি, ‘সত্যিটা হলো, ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়েরা তাদের জাতীয় দলকে খুব ভালোবাসে। এটা তাদের স্বাভাবিক চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে তারা কখনো কখনো ভালো খেলতে গিয়ে অনেক বেশি চাপ অনুভব করে। এই চাপই তাদের ভালো পারফর্ম করার পথে বাধা সৃষ্টি করে থাকতে পারে।’
ব্রাজিলের কোচ হিসেবে কার্লো আনচেলত্তির ‘প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট’ আগামী ৫ জুন ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচ। ১০ জুন সেলেসাওরা খেলবে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে।
দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের (কনমেবল) বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার চারে আছে ব্রাজিল। এই অঞ্চল থেকে শীর্ষ ছয় দল সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবে। ৭ নম্বরে থাকা দলকে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফের বাধা টপকে আসতে হবে।