দীর্ঘদিন ক্যানসারের সাথে লড়াই শেষে হার মানলেন ফুটবল মাঠের লড়াইয়ের রাজা পেলে। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই হলো নক্ষত্রের পতন। ব্রাজিল কিংবদন্তির মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শোকগ্রস্ত ফুটবল বিশ্ব একে একে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। প্রিয় আইডল পেলেকে নিয়ে নেইমার লিখলেন তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ব্র্রাজিলের ১০ নাম্বার জার্সিতে খেলতেন পেলে, যে জার্সির বর্তমান মালিক নেইমার। নেইমারকে নিয়ে সবসময়ই গর্ব করেছেন পেলে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ভাবতেন তাঁকে। এমন কি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, নেইমারের থেকে ভাল খেলতে হবে মেসিকে যদি সেরা হতে চায়।
‘পেলে চিরন্তন’ আখ্যা দিয়ে পেলের সাথে নিজের ছবি শেয়ার করে নেইমার লিখলেন, ‘পেলের আগে ১০ শুধুই একটা সংখ্যা ছিল। কোথাও একটা এমন লেখা পড়েছিলাম। এই বাক্যটা সুন্দর তবে অপূর্ণ। আমি বলব, পেলের আগে ফুটবল শুধুই একটা খেলা ছিল। সব কিছু পাল্টে দিয়েছিলেন পেলে। ফুটবলকে শিল্প বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। খেলাটাকে সুন্দর করে তুলেছিলেন। আনন্দ দিয়েছিলেন। গরীব এবং বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন পেলে। ব্রাজিলকে একটা ছবি দেখতে সাহায্য করেছিলেন। ধন্যবাদ রাজা, তোমার জন্য ফুটবল এবং ব্রাজিলের স্থান উঁচু হয়েছে। পেলে নেই কিন্তু তাঁর জাদু থেকে যাবে। পেলে সব সময় থেকে যাবেন।’
২০২০ সালের ম্যারাডোনার প্রয়াণের পর পেলে ছিলেন ফুটবল বিশ্বের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে যিনি অনুপ্রেরণা যোগাতেন খেলোয়াড়দের। ২ বছর পর তিনিও চলে গেলেন। দীর্ঘদিন অন্ত্রের ক্যানসারের সাথে লড়াই করেও প্রিয় ব্রাজিলের মনোবল হয়েছিলেন সবসময়।
কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের খেলা গ্যালারিতে বসে দেখার ইচ্ছা থাকলেও শরীর সায় দেয়নি। বিশ্বকাপ চলাকালীন শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। হাসপাতাল কক্ষে শুয়ে শুয়ে দেখেছেন সবগুলো খেলা। দলকে উদ্দেশ্য করে অনুপ্রেরণা পাঠিয়েছেন দূর থেকেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি নিজের ছবি শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘১৯৫৮ সালে আমি রাস্তায় হাঁটার সময় ভাবতাম কীভাবে বাবাকে দেওয়া কথা রাখব। আমি জানি, তোমাদের মধ্যেও অনেকে নিজেদের বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে চাও। কথা রেখ। আমি হাসপাতালে শুয়ে তোমাদের জন্য গলা ফাটাব। শুভেচ্ছা রইল।’
কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে ব্রাজিলের বিদায়ের পর নেইমারের কান্নায় ভেঙে পড়া দেখে নেইমারকে উদ্দেশ্য করে পেলে লিখেছিলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে দিনটি আমাদের ছিল না। তবে তুমি (নেইমার) সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। অনেকে তোমার মতো হতে চায়। ৫০ বছর আগে যে রেকর্ড গড়েছিলাম, একমাত্র তুমি ছাড়া আর কেউ এর পিছু তাড়া করতে পারেনি। তুমি করে দেখিয়েছ, প্রিয়।’