বাংলা একাডেমির পুরস্কার বিতর্ক: সাজ্জাদ শরিফ পদত্যাগ করলেন কেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ০২:২৪ পিএম

বাংলা একাডেমির পুরস্কার বিতর্ক: সাজ্জাদ শরিফ পদত্যাগ করলেন কেন

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর দেয়া পোস্ট ও বক্তব্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সাজ্জাদ শরিফ। একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে এরই মধ্যে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।

বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে ওঠা বিতর্কের মধ্যেই এই পদ ছাড়লেন সাজ্জাদ শরিফ। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি বাংলা একাডেমির নতুন গঠন করা নির্বাহী পরিষদে যুক্ত হয়েছিলেন।

পদত্যাগ পত্রে সাজ্জাদ শরিফ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন—সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত—কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিপ্রায় আমার কখনো ছিল না। শেখ হাসিনার দীর্ঘ নিষ্পেষণমূলক অপশাসনের পতনের পর দেশের পরিবর্তিত পটভূমিতে—এক অন্তর্বর্তী সময়ে—বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য আমার কাছে অনুরোধ আসে। সে অনুরোধে আমি সম্মত হয়েছি কেবলই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রতি আমার নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কারণে।’

সাজ্জাদ শরিফ লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়ে সম্প্রতি সংস্কৃতি উপদেষ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সংবাদ সম্মেলনে উপর্যুপরি কিছু বক্তব্য রেখেছেন। তার সেসব বক্তব্য বাংলা একাডেমি, একাডেমির মহাপরিচালক এবং নির্বাহী পরিষদ ও পুরস্কার নির্বাচক কমিটির সদস্যদের সুরক্ষা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে এবং তাঁদের পদের অসম্মান ঘটিয়েছে। সংস্কৃতি উপদেষ্টার সেসব বক্তব্যের পর বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না।’

পদের অমর্যাদা করে দায়িত্বপালন সম্ভব না জানিয়ে সাজ্জাদ শরিফ লেখেন, ‘নিছক ব্যক্তিগত কারণে নয়, বস্তুত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি এবং একাডেমির উল্লিখিত পদগুলোর অমর্যাদা করে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া নৈতিকভাবে আমার নিজের কাছে আর সমর্থনযোগ্য নয়।’

বাংলা একাডেমিতে থাকাকালীন মধুর অভিজ্ঞতার কথাও পদত্যাগপত্রে লিখেছেন সাজ্জাদ শরিফ। তিনি লেখেন, ‘এই চিঠির মধ্য দিয়ে আমি বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আশা করি, এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’

পুরস্কার নিয়ে যা হলো

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। কোনো নারী কেন তালিকায় নেই এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। একই প্রশ্ন তোলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তালিকায় ‘নারী লেখক’ না থাকাকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। এ পুরস্কারের জন্য ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এরপর শনিবার ঘোষিত পুরস্কার স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায় বাংলা একাডেমি। এ নিয়েও পোস্ট করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।

নতুন যারা পুরস্কার পাচ্ছেন

বুধবার মধ্যরাতে বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারের জন্য সাতজনের নতুন তালিকা ঘোষণা করে। সেখানে আগের দশ জনের তালিকা থেকে কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হান্নান এবং শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজের নাম বাদ দেওয়া হয়।

নতুন তালিকা অনুযায়ী এবার বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছেন কবিতায় মাসুদ খান, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেওয়ার কথা রয়েছে।

Link copied!