দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। তালগাছ লাগানো হলেও এর সুফল কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে। এরই প্রেক্ষিতে ৪৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প খসড়া করা হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বাস্তবায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা কমে আসবে। ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমণ দিবস। দূর্যোগে বিপর্যয় রোধ করতে নানা কাজ করছে সরকার।
সারাদেশে ৩০০ পূর্বাভাস কেন্দ্র
সারাদেশে তিনশোর বেশি পূর্বাভাস কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা ভাবছে সরকার। বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগে সতর্কবার্তা দেওয়ার যন্ত্র কিনবে সরকার।
বজ্রপাত নিয়ে ৪৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তিনটি পর্যায় রয়েছে এই প্রকল্পের। এর মধ্যে মানুষকে সচেতন করাও রয়েছে। বজ্রপাতের আগে পজিটিভ-নেগেটিভ চার্জগুলো তৈরি হবে। চার্জ তৈরি হওয়ার ৪ মিনিট পরই বজ্রপাত হয়। এজন্য গুড়ুগুড়ু ডাক শুনলে যাতে মানুষ ঘরে থাকে বা মেঘ দেখে যাতে ঘরে থাকে। সেই সচেতনতা তৈরির কাজ করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। এছাড়া অ্যাপসের মাধ্যমেও যেন লোকজন জানতে পারে সেটা নিয়েও কাজ হবে।
ছাউনি ও বিশেষ তার বসবে
বজ্রপাতের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বজ্রপাতে সবচেয়ে মারা যাচ্ছেন বেশি কৃষক। খোলা মাঠে কিংবা ফসলি জমিতে কাজ করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এর সমাধানে জমির আইলে ৩৫ লাখ তালগাছ রোপণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। কিন্তু এই বিষয়ে সময় লাগে। তাই আপাতত ছাউনি ও বিদ্যুৎ পরিবাহী অ্যারিস্টার বসানো হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন জানান,বজ্রপাতে হাওর অঞ্চলের লোকজন সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে হাওর অঞ্চলের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। যেগুলোর পাইলট পকল্প চলমান। সেখানে সফলতা এলেই দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এক ডেসিমেল জায়গায় একটা পাকা ঘর থাকবে। প্রত্যেক ঘরে একটি করে লাইটনিং অ্যারেস্টার দেওয়া হবে। যাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সতর্কবার্তা শোনার পর মানুষ সেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে। বজ্রপাত না হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে।
১১ বছরে বজ্রপাতে ২৮০৫ মৃত্যু
২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ১১ বছরে বজ্রপাতে মোট ২ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৮০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১১ সালে মারা গেছে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে মারা গেছে ২০১ জন, ২০১৩ সালে মারা গেছে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে মারা গেছে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে মারা গেছে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে মারা গেছে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে মারা গেছে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে মারা গেছে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে মারা গেছে ১৯৮ জন, ২০২০ সালে মারা গেছে ২১১ জন এবং ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর ৩৩৪ জনন। যদিও বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।
এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে আশঙ্কা বেশি
এ অঞ্চলের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। গত এক দশকে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যান সরকারকে ভাবিয়ে তুলছে। বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি ঠেকাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার।
বজ্রঝড়ের স্থায়ীত্ব ৩০ মিনিট
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বজ্রপাত কিংবা বজ্রঝড়ের স্থায়ীত্ব সর্বোচ্চ ত্রিশ মিনিট। তাই ছাউনি নির্মাণ করে মানুষের প্রাণহানি কমানো সম্ভব। অর্থাৎ কংক্রিটের তৈরি ছাউনি তৈরি করা হবে, ঝড় শুরু হলে পশু নিয়ে কৃষকেরা সে ছাউনিতে আশ্রয় নেবেন। ঝড় থেমে গেলে মাঠে ফিরে যাবেন। এমন পরিকল্পনা থাকছে প্রকল্পে।
জানা গেছে, ছাউনি নির্মাণের পাশাপাশি বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করারও চিন্তা করা হচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অ্যারেস্টার বসানো হবে। এ যন্ত্র বজ্রপাত শোষণ করে নেবে। স্পেনের এ প্রযুক্তি বজ্রপাতের ত্রিশ মিনিট আগেই পূর্বাভাসও দিতে পারে। এটি স্থাপন করা গেলে এতে মৃতের হার কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।