মে ২৭, ২০২১, ০৯:৪৬ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান গত ১৫ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরবর্তীতে ২৩ তারিখ রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। সম্প্রতি ঘটা এ ঘটনায় জনমানুষের মনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ভয়াবহ এলএসডি মাদকের সন্ধান পায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
হাফিজুরের মরদেহ শনাক্তের পর থেকে দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদক তুহিন কান্তি দাস এবং তৌফিক হোসাইন মবিন এর করা সরেজমিন অনুসন্ধান থেকে পাওয়া সকল তথ্য অনুযায়ী হাফিজুরের নিখোঁজ, মরদেহ শনাক্ত এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
বন্ধুদের আড্ডা থেকেই সূত্রপাত
১৫ মে হাফিজুর কার্জন হলের রসায়ন বিভাগের করিডোরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে ঢামেকের সামনে তিনি অপ্রকৃতস্থ আচরণ শুরু করেন। রাতে ঢামেকের সামনে তাকে গলাকাটা অবস্থায় দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সুরতহাল অনুযায়ী সেখানেই তিনি রাত নয়টা চল্লিশে মৃত্যুবরণ করেন।
পুলিশের ভাষ্যে হাফিজের মৃত্যু
হাফিজের মরদেহ যেদিন শনাক্ত করা হয়, সেদিন দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদকদ্বয় ঢামেকের মর্গে উপস্থিত ছিলেন। শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সেসময় বলেন, প্রাথমিক তদন্ত এবং সাক্ষীদের বক্তব্য অনুযায়ী হাফিজুর সেদিন অপ্রকৃতিতস্থ অবস্থায় ঢামেকের সামনে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। সেখানে আনোয়ার হোসেন নামের এক ডাববিক্রেতার দোকান থেকে দা নিয়ে নিজের গলাতেই নিজে আঘাত করেন। পুলিশ খবর পেয়ে তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে হাফিজ চিকিৎসা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। পরে জোর করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসারত অবস্থায় রাত আনুমানিক দশটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৃত্যুর সময়ে হাফিজের শরীরের আরও কয়েক জায়গায় জখমের চিহ্ন ছিলো। পরে শাহবাগ থানার একজন কর্মকর্তা জানান, পরিচয় শনাক্ত করার মতো কোন কিছু তার সাথে পাওয়া না যাওয়ায় তার মরদেহ অজ্ঞাতনামা হিসেবে মর্গে পড়ে ছিলো।
বন্ধুদের ডাকে ঈদের পরদিনই ক্যাম্পাসে ফেরেন হাফিজুর
গত ১৫ মে ঈদের পরদিন গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরেন তথ্য ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র হাফিজুর রহমান।
ঢাকায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তার বড়ভাই হাবিবুর রহমান দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদকদ্বয়কে জানান, হাফিজুর ঈদের পরের দিন ব্যস্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য। তাকে আমরা নিষেধ করেছিলাম এত দ্রুত ফিরতে। সে বলছিলো তার বন্ধুরা তাকে বারবার করে ক্যাম্পাসে যেতে বলছে, খুব জরুরী কাজের জন্য।
হাফিজের বন্ধুদের বরাতে ১৫ মে সন্ধ্যার ঘটনা
হাফিজুরের বন্ধুদের বরাতে জানা গেছে, ১৫ মে সন্ধ্যার দিকে কার্জন হলের রসায়ন বিভাগের করিডোরে হাফিজুরের তার বন্ধু আসিফ মোহাম্মদ বাপ্পী, খন্দকার রাফসান, অন্তু ঠাকুর ও নূর উদ্দিন আল মাসুদ সঙ্গে আড্ডা দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসিফ মোহাম্মদ বাপ্পী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের, অন্তু ঠাকুর এবং নূর উদ্দিন আল মাসুদ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আড্ডায় থাকা অপরজন, খন্দকার রাফসান ঢাকা কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
শাহবাগ থানায় হাফিজের বন্ধুদের বক্তব্য
সেদিন আড্ডায় উপস্থিত থাকা আসিফ মোহাম্মদ বাপ্পী ও খন্দকার রাফসানকে শাহবাগ থানার কর্মকর্তারা ২৪ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকেছিলেন। খবর পেয়ে দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদকদ্বয় রাত নয়টার দিকে থানায় গেলে তাদের দুজনকে পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কামরায় দেখতে পান। তার কিছুক্ষণ পর বাপ্পীকে অন্য রুমে নিয়ে থানায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
পরবর্তীতে প্রতিবেদকদ্বয় শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং রাফসান দুজনের সম্মতিতে রাফসানের সাথে হাফিজুরের মৃত্যু এবং ১৫ মের ঘটনাবলী নিয়ে কথা বলা শুরু করেন।
রাফসান জানান, সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তিনি সেদিন কার্জন হলে ঢুকেছিলেন। তার কিছুক্ষণ পরে তাদের সাথে আড্ডায় হাফিজ যোগ দেন। তিনি বলেন, সেদিন হাফিজকে দেখে তার মনে হয়েছিলো অন্যান্য দিনের তুলনায় হাফিজ বেশ খানিকটা অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছেন।প্রতিবেদকদ্বয় রাফসানকে জিজ্ঞাসা করেন তার অস্বাভাবিকতা কিরকম ছিলো। ঠিক সেই মুহূর্তে শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রাফসানকে ডেকে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমানের কামরায় নিয়ে যান।
এ ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রতিবেদকদ্বয় ওই কামরাতে গিয়ে আবার হাফিজুরের অস্বাভাবিকতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তখন রাফসান সরাসরি উত্তর না দিয়ে নানাধরণের অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে প্রসঙ্গ ঘোরানোর চেষ্টা করতে থাকেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার কামরুজ্জামান এসে রাফসানকে অন্য রুমে ডেকে নিয়ে যান। তার পর আরও প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার করে আরও বেশ কয়েকবার কথা বলতে চাইলেও রাফসান এরপর আর এই প্রসঙ্গে কোন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি।
ফেসবুকে হাফিজের বন্ধুর বক্তব্য
সেদিন আড্ডায় উপস্থিত থাকা হাফিজের আরেক বন্ধু অন্তু ঠাকুর সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপে এক স্ট্যাটাসে সেদিনের ঘটনা তার ভাষ্যে বর্ণনা করেছেন। স্ট্যাটাসটিতে অন্তুর দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, হাফিজকে দেখে তার সেদিন কোন বিষয় নিয়ে সমস্যাগ্রস্ত মনে হয়েছিলো। তবে তারা সেটিকে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সমস্যা মনে করে বেশি গুরুত্ব দেননি। অন্তুর দাবি, হাফিজ হঠাত করে আবার সেদিনই বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। কিছুক্ষণ আটকে রাখার চেষ্টা করলেও পরে হাফিজকে বিদায় জানান তারা।
স্ট্যাটাসটিতে অন্তু লিখেছেন, “কিন্তু কিছুক্ষণ পর শুনি হাফিজ নাকি দৌড়াচ্ছে। একবার কার্জনের ভিতরে ঢুকল আবার দোড়ে বের হয়ে গেল। তার পিছে পিছে কয়েকজন গিয়েও তাকে আর পেল না। আমরা তখন সবাই কার্জনে আর হাফিজ দৌড়ে কই গেছে কেউই জানি না”।
অন্তু দাবি করেছেন, ক্যাম্পাস এলাকা হওয়ায় তারা এ ব্যাপারে খুব বেশি চিন্তা করেননি। হাফিজ মারা যাবে তা বুঝতে পারলে তারা যেভাবেই হোক হাফিজকে আটকে রাখতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত
রক্তাক্ত অবস্থায় হাফিজুর ঢামেকের বহির্বিভাগ গেটের সামনে বসে রয়েছেন এমন একটি ভিডিও দ্য রিপোর্টের হাতে আসে। ভিডিও গ্রহণকারী রায়হান কবীর রনো জানান, সেদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পড়ছিলো। তারা কয়েকজন মিলে ঢামেক বহির্বিভাগের সামনের ছাউনিতে চা খাচ্ছিলেন। হঠাত তারা খেয়াল করেন রক্তাক্ত অবস্থায় একজন এসে বহির্বিভাগের গেটের সামনে বসে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আমি একটু এগিয়ে যাই। তারপর পুলিশ এসে গেলে আমি দূর থেকে একটি ছোট ভিডিও করি। ওই যুবককে দেখে মনে হচ্ছিলো তিনি হয়তো বাচার আকুতি থেকে চিকিৎসা চাচ্ছেন।
২৩ মে রাতে প্রত্যক্ষদর্শী ডাববিক্রেতা আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলতে যান দ্য রিপোর্টের এই দুই প্রতিবেদক। ডাববিক্রেতা জানান, হাফিজ তার কাছ থেকে ডাব কাটার দা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে নিজের গলায় চালান। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশ হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করলে হাফিজ চিকিৎসা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে পুলিশের সাথে শারীরিক ধস্তাধস্তি করেন। পরে পুলিশ জোর করে হাফিজকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পরিবার
২৩ মে শাহবাগ থানায় আসেন হাফিজের বড় ভাই হাবিবুর রহমান। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের তাকে ১৫ তারিখ ঢামেক এলাকায় অপ্রকৃতিতস্থ অবস্থায় এক যুবকের মারা যাওয়ার ঘটনা বলেন এবং সেই যুবকের ছবি দেখান। সেই ছবি দেখে হাবিবুর রহমান তার ছোটভাই হাফিজকে শনাক্ত করেন।
পরবর্তীতে মর্গে হাফিজের মরদেহ বুঝে নিতে এসেছিলেন হাবিবুর রহমান। সেখানে হাফিজের সহপাঠী এবং সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ ব্যাপারে কোনধরণের আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। সর্বশেষ ২৬ তারিখ দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার বাবা ও মা শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ অবস্থায় তারা আইনী কোন প্রক্রিয়ায় যাবেন কিনা সে ব্যাপারে তারা এখনও পারিবারিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি।
নিখোঁজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, জিডি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
১৫ মে এর পর হাফিজের খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন হাফিজের বন্ধু-সহপাঠীরা। তারা হাফিজের সন্ধান চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করতে থাকেন। ২০ মে হাফিজের সাথে আড্ডায় উপস্থিত বাপ্পী এবং রাফসানসহ আরও কয়েকজন শাহবাগ থানায় জিডি করতে যান।
যারা জিডি করতে গিয়েছিলেন তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বিস্তারিত শোনার পর তাদেরকে পরামর্শ দেন এ ধরণের ঘটনায় বন্ধু বা সহপাঠী কেউ জিডি করলে তারা নিজেরাই ঝামেলায় পড়তে পারেন। সেই বিবেচনায় হাফিজের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানায় নিকটাত্মীয় কাউকে জিডি করতে বলার জন্য তাদেরকে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। পরের দিন, ২১ মে কসবা থানায় হাফিজের নিখোঁজের ঘটনায় তার বড় ভাই জিডি দায়ের করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিন বন্ধু ডিবি কার্যালয়ে
১৫ মে কার্জন হলে হাফিজের সাথে আড্ডায় উপস্থিত চারজনের মধ্যে আসিফ মোহাম্মদ বাপ্পী এবং খন্দকার রাফসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ তারিখে ডেকে আনা হয় শাহবাগ থানায়, সেখান থেকে পরের দিন তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। পরের দিন ২৫ মে ওই আড্ডায় উপস্থিত নূর উদ্দিন আল মাসুদকেও প্রথমে থানায় এবং পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
একই দিনে হাফিজের এক বান্ধবী চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী নুজহাত নূর সৃষ্টিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহবাগ থানায় ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী হাফিজের মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে তিনজনকে ডিবি কার্যালয়ে রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির কাজ শুরু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় হাফিজুরের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে একটি তদন্তে কমিটি করার কথা জানিয়েছেন। সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর কার্যালয়ে গেলে তিনি এবং তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানান, তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান লিটন কুমার সাহা জানান, পুলিশ অপমৃত্যু মামলা দায়ের করলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হওয়ায় নিজস্ব দায়ভার থেকে তারা আলাদা করে এ মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
সেদিনের ঘটনার ওপর পুলিশের বক্তব্য
হাফিজের মরদেহ শনাক্ত করা হয় ২৩ মে রাতে। সে সময় ঢামেকের মর্গে উপস্থিত শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান তার বক্তব্যের সপক্ষে একটি ভিডিও দেখান। ভিডিওটিতে দেখা যায় ঢামেকের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন গেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ ডাবের দোকানের বিক্রেতা নিজের হাতে একটি দা দেখাচ্ছেন। তিনি বলছেন, তিনি কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই তার কাছ থেকে ওই দা নিয়ে সেটি নিজের গলায় চালান হাফিজ।
দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদকদ্বয় তার পরের দিন ২৪ মে শাহবাগ থানায় যান। থানার কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তাদেরকে জানান, ঢামেকের সামনে এক যুবক সেখানের একজন ডাবওয়ালার কাছ থেকে দা কেড়ে নিয়ে নিজের গলায় চালিয়েছেন, এমন খবর পেয়ে প্রথমে সেখানে উপস্থিত পুলিশের দুজন দারোগা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, তার কাছে সেদিন রাত আটটার পরে ফোন আসে। তখন তিনি এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে নিজে ঢামেকে চলে যান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে রক্তাক্ত অবস্থায় ফুটপাথে বসে আছেন নির্লিপ্ত হাফিজুর। দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে একটি রিকশায় উঠিয়ে দেন। রিকশাচালককে বলেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান আরও বলেন, তাকে দুবার রিকশায় ওঠানো হয়। তিনি বারবার নেমে যাচ্ছিলেন, চিকিৎসা না করানোর কথা বলছিলেন। কামরুজ্জামান তার মোবাইল ফোনে একটি ছবি প্রতিবেদককে দেখান। ছবিতে দেখা যায়, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তিনি স্ট্রেচারে শুয়ে আছেন।
হাফিজ হয়তো যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন সেজন্য চিকিৎসার সুবিধার্থে হাত-পা বাধা হতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি আবারও বলেন, ‘হাফিজ চিকিৎসা নিতে চাইছিলেন না।’
সেদিন হাফিজকে মেডিকেলে নেওয়ার পর ডাব বিক্রেতা ওই রক্ত মাখা দা টি ধুয়ে ফেলেন। পরে শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান গিয়ে সেটি সংগ্রহ করেছেন। সেদিন থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাফিজুরের সুরতহালের রিপোর্টে উল্লেখ আছে, হাফিজুরের মৃত্যু ধারালো অস্ত্র দ্বারা কাটা জখমের কারণে হয়েছে। এছাড়াও ডান হাতের বাহুর নিচে পাশাপাশি দুটি জখম এবং পেটের নিচে একটি জখম রয়েছে। ডান হাতের কনুইতে এবং বাম পায়ের হাঁটুতে এবং হাঁটুর নিচে জখম আছে।
তদন্ত সূত্রে এলএসডি বিক্রেতা চক্রের সন্ধান
২৭ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, হাফিজের বন্ধুদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে হাফিজ এলএসডি গ্রহণে অভ্যস্ত ছিলেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অভিযান চালিয়ে ঢাকায় এলএসডি বিক্রেতা চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত তিনজন হলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র সাদমান সাকিব রুপল (২৫) ও আসহাব ওয়াদুদ তুর্জ (২২) এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিব আশরাফ (২৩)।
এদিকে ২৫ মে রাত আনুমানিক দশটার দিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন-উর-রশীদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, হাফিজুরের মৃত্যুর ঘটনায় তাদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। হাফিজুর হত্যা সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সকল তথ্য আমরা পেয়েছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই এ মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো।