দেশের সরকারি ৯ কলেজকে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ কলেজকে রাজশাহীর ও ৫ কলেজকে চট্টগ্রাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি কলেজ, স্যার আশুতোষ সরকারি (বোয়ালখালী) কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ। অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো হলো- রাজশাহী সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ ও রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ।
নতুন করে নয়টি সরকারি কলেজকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা নিয়ে শিক্ষার্থী মহলে উঠেছে সমালোচনা। সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিতুমীর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজীব কাজী বলেন, ‘যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলো সাতটি কলেজ, আমরাই ছিলাম প্রথম ব্যাচ, এর আগে আমরা অনেক শুনেছি যে এখানে পরীক্ষা, ফলাফলগুলো অনেক দেরিতে (প্রকাশ) হয়। পরীক্ষার ফলাফল দিতে অনেক লেইট (বিলম্ব্) করে। আমরা আল্টিমেটলি তখন অধিভুক্ত হলাম এবং আমরা যখন ভর্তি হলাম, তখন দেখলাম যে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার আগে যেমনটা ছিল, তার চেয়ে একটু ভালো হয়েছে। এটা হয়তো অনেক আন্দোলন বা অনেক চাপের কারণে হতে পারে। আগে যেমনটা ছিল এখন আমার কাছে মনে হয় যে সেই জিনিসটা একটু কমছে।’
বিষয়টি নিয়ে তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ইডেন মহিলা কলেজের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোজা খানম বলেন, ‘পড়াশুনা জিনিসটা শুধুমাত্রই যে সার্টিফিকেটের তা কিন্তু না। এটা একটা মানসিক অগ্রগতিরও বিষয়। একটা মানসিক প্রশান্তিরও বিষয়। যখন কিনা আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত (অধিভুক্ত) হয়েছি, আমাদের মানসিক স্পিরিটটা (স্ফূরণ), অবভিওয়াসলি (অবশ্যই) অনেক বেড়ে গেছে। আমি আশা করছি, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছে যেসব কলেজ, তাদের উপকৃত হওয়া নির্ভর করছে ওই যে কয়টা (কলেজ) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে, তারা কীভাবে বিষয়টাকে সিঙ্ক্রোনাইজ করছে তার ওপর।’
দেশের ৭ কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ার বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে ঢাকা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাসুদ মোল্লা বলেন, ‘ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পরে মোটামুটি ভালো ও খারাপ দুটিই হয়েছে। সিলেবাসটা ঢাবি প্রণয়ন করে। কিন্তু পাঠদান করে কলেজ (প্রশাসন)। যদি এসব কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত থাকে তবে শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই অনুশাসন যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ ও অপরাপর করণীয় বিষয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমার মনে হয় না। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পরেই সাতটি কলেজের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাদেরকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমার মনে হয় যে এসব অভিজ্ঞতা সামনে রেখে রাবি ও চবি অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান অনেক উন্নত হবে।’
২০১৭ সালে ঢাকার সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এর আগে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এসব বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত ২৫ বছরে শুধু পরীক্ষার্থী তৈরি করছে। চাকরি বা ব্যবসার বাজারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের অবস্থান তলানিতে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু অনুশাসন দেন।