মে ২৯, ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও একজন নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
“এটা গোপন বিষয়। আমরা চাইছি, গোপনেই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাবো। আমি মন্তব্য করতে চাইছি না”
- অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, হল প্রাধ্যক্ষ
মঙ্গলবার (২৮ মে) হল প্রাধ্যক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এতে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: “একপক্ষকে তথ্য দিয়ে” মার খেলেন নিরাপত্তাকর্মী
ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা ছাত্রলীগ নেতা হলেন আতিকুর রহমান আতিক। তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের অন্য দুই কর্মী হলেন শামসুল আরিফিন খান সানি ও আজিজুল হক আকাশ। তারা দুজনই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। অভিযুক্ত তিনজনই শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
গত ১১ মে হলের অতিথিকক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে রাত ১১টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দফায় দফায় রামদা ও লাঠিসোঁটা হাতে একে অন্যকে ধাওয়া দেয়। পরদিন সকালে তথ্য পাচারের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা আতিকের নেতৃত্বে শামসুল আরিফিন খান সানি ও আজিজুল হক আকাশসহ কয়েকজন সোহরাওয়ার্দী হলের নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুল ইসলামকে মারধর করেন।
আরও পড়ুন: গেস্টরুমে বসা নিয়ে মধ্যরাতে রাবি ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ
ঘটনা তদন্তের জন্য গত ১৪ মে সন্ধ্যায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. অনুপম হীরা মণ্ডলকে। বাকি দুজন সদস্য হলেন আবাসিক শিক্ষক ড. মো. ফারুক হোসেন ও তানজিল ভূঞা।
তদন্ত কমিটিকে দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও দুই সপ্তাহ পর গতকাল মঙ্গলবার হল প্রাধ্যক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে আটটি সুপারিশ করে কমিটি।
আরও পড়ুন: রাবিতে আবার রাতভর দেশীয় অস্ত্রের মহড়া ছাত্রলীগের
প্রতিবেদন সূত্র জানায়, হলের নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুলকে বেধরক পেটানোর ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়া, সবুজ বিশ্বাসের ওপর নির্যাতন, হল ক্যান্টিনে ৪৬ হাজার ৮২০ টাকা বাকি পরিশোধ না করা, হল প্রশাসনকে হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমানের আবাসিকতা বাতিল ও ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া আতিকের নেতৃত্বে বহিরাগত শামসুল আরিফিন খান সানি ও আজিজুল হক আকাশসহ অজ্ঞাত কয়েকজন নিরাপত্তাপ্রহরী মনিরুলকে পেটানোর জন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়।
হলে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, সংঘর্ষের ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা, হলে অবস্থানরত অনাবাসিক ও বহিরাগতদের পুলিশি তল্লাশির মাধ্যমে হল থেকে বের করা, কেউ অবৈধভাবে শিক্ষার্থীকে হলে ওঠালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, হলে ছাত্রলীগের ‘রুমওয়ার্ক’ বন্ধের জন্য কড়াকড়ি নির্দেশ এবং হলের অতিথি কক্ষে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধের সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন: রাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের চার নেতা বহিষ্কার
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অনুপম হীরা মণ্ডল বলেন, “আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। এতে ঘটনার কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু সুপারিশ হল প্রশাসনের কাছে করেছি। যদিও সেটা গোপনীয়। প্রাধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবেন।”
তবে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, “এটা গোপন বিষয়। আমরা চাইছি, গোপনেই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাবো। আমি মন্তব্য করতে চাইছি না।”