ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গাজার শেষ সক্রিয় হাসপাতাল কামাল আদওয়ানে গত বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। উত্তর গাজার এই হাসপাতালটিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস তাদের কমাণ্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করছে, এমন অভিযোগেই অভিযান চালানো হয়। তবে অভিযানের পর কমাণ্ড সেন্টারের বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি ইসরায়েল।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই হাসপাতালটি ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। কয়েকদিন আগে বাহিনীর পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় হাসপাতালের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকরা এতে অস্বীকৃতি জানায়।
এই অস্বীকৃতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার ড্রোন দিয়ে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এক পর্যায়ে হাসপাতালটির ভেতরে ঢোকে সেনাসদস্যরা। হাসপাতালে থাকা চিকিৎসাধীন রোগিদেরও বের করে দেওয়া হয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, অভিযানের সময় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এদের মধ্যে হাসপাতালের পরিচালক হুসসাম আবু সাফিয়াও আছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক মুখপাত্র জানান, হাসপাতালটিতে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চালানোর পর গাজার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ডব্লিউএইচও কর্মকর্তা মার্গারেট হ্যারিস আল জাজিরাকে বলেন, “গাজার সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর হামলা হচ্ছে। গাজার হাসপাতালগুলো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এটি গাজার জনগণের প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর শাস্তির প্রকাশ।”
আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা নিষিদ্ধ। কিন্তু ইসরায়েল গাজার হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক হাসপাতাল ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এর আগে ইসরায়েল সেনাবাহিনী গত ১৮ মার্চ আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান শুরু করে। তারা অভিযোগ করে, ওই হাসপাতালে হামাসের সদস্যরা লুকিয়ে আছেন। তাদের নির্মূল করতে এ হামলা।
তখন পুরো আল শিফা হাসপাতাল বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় হাসপাতালের প্রাচীর। এমনকি হাসপাতালটির কয়েকটি ভবন পুড়িয়েও দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছাকাছি একটি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন স্বাস্থ্যকর্মীও ছিলেন। তারা হলেন- ডা. আহমেদ সামৌদ, ল্যাব টেকনিশিয়ান ইসরাহ আবু যায়দা ও ফারেস আল হুদালি, প্যারামেডিক আব্দুল মজিদ আবু আল আইশ ও মাহের আল আজরামি।
হামলার সময় মেডিকেল কর্মীরা তাদের পরিবারসহ ওই ভবনে অবস্থান করছিলেন।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা গাজায়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। ওই হামলায় ইসরায়েলের ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়। সেদিনই গাজায় হামলা চালাতে শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হাতে অন্তত ৪৫ হাজার ৪৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা লক্ষাধিক।