জুন ২৮, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
ফাইল ফটো
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠনের উপায় নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করেছে ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রতিবেশী এই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে দক্ষিণ এশীয় ভূরাজনীতি ও কূটনীতির চারজন শীর্ষ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বর্তমান ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের অবস্থা এবং কূটনৈতিক অবস্থান পুনরুদ্ধারের কৌশল নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ছিলেন ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ডিন অমিতাভ মাত্তু।
আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জটিলতা সম্পর্কে গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করেন এবং আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যত সহযোগিতা গড়ে তুলতে জোর দেন।
আলোচনায় একটি সাধারণ উপলব্ধি ছিল—বাংলাদেশকে পাকিস্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ঠিক নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐতিহ্যের ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া উচিত।
২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে গণবিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। এই পটভূমিতে, সম্পর্ক পুনর্গঠনের কূটনৈতিক পথ খুঁজতে এই বৈঠক বসে।
বৈঠকে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল—ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমে বিদ্যমান ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে ‘সাংস্কৃতিক কূটনীতি’ এগিয়ে নেওয়া।
সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব করেন, পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্বে একটি ‘সফট লঞ্চ’ কৌশলের মাধ্যমে সংস্কৃতি ভিত্তিক জনসম্পৃক্ততা গড়ে তোলা হোক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অভিন্ন উত্তরাধিকারের মাধ্যমে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
গত ২৩ জুন কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহর বৈঠককে এই ধরনের ‘প্যারা-ডিপ্লোমেসি’র ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বৈঠকে সংসদ সদস্যরা আরও আলোচনা করেন বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, অবৈধ অভিবাসন এবং সম্প্রতি ১৯ জুন চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে।
এই বৈঠকটি ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ মোকাবেলায় নতুন কৌশল গ্রহণে আগ্রহী। কূটনীতি, সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক সম্পৃক্ততার সমন্বয়ে এই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথ খোঁজা হচ্ছে।