হিজাব ইস্যুতে করা মামলায় কর্ণাটক হাইকোর্টের রায় নিয়ে ঐকমত্যে আসতে পারল না ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ এ মামলায় ‘বিভক্ত রায়’ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের এই বিভক্ত রায়ের ফলে এবার উচ্চতর বেঞ্চে গেল হিজাব মামলা।
প্যানেলের দুই বিচারকের একজন হেমন্ত গুপ্ত। তিনি বলেছেন, আমাদের মতের ভিন্নতা রয়েছে। তিনি শ্রেণিকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে তার মত দিয়েছেন। অন্যদিকে বিচারক সুধাংশু ধুলিয়া মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার নিষেধাজ্ঞা বাতিলের পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
বিচারক সুধাংশু ধুলিয়া বলেছেন, হিজাব পরা আসলে ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। এর বাইরে কিছু নয়। সবকিছু ঊর্ধ্বে আমার মাথায় ছিল মেয়েশিশুদের শিক্ষা। আমি আমার বিচারক ভাইয়ের মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি।
এর আগে শুনানি চলাকালে ভারতের সলিসিটর জেনারেল তথা কর্ণাটক সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা দাবি করেন, কুরআনে উল্লেখ থাকলেই কোনো প্রথা মানা জরুরি হয় না। শুধু যে প্রথাগুলো নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে সেগুলো জরুরি বলে বিবেচনা করা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কর্ণাটকের একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরিহিত মুসলিম ছাত্রীদের বসতে বাধা দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ইউনিফর্মের বাইরে কাউকে অন্য কোনো পোশাক পরতে দেওয়া হবে না। সেই সিদ্ধান্ত যে বিতর্কের জন্ম দেয়, অচিরেই তা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের বাইরেও এর প্রভাব পড়ে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অনুগামীরা গেরুয়া উত্তরীয় ও চাদর পরতে শুরু করেন। হিজাবের পক্ষে–বিপক্ষে শুরু হয় আন্দোলন। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
বিতর্কের রেশ থাকতে থাকতেই কর্ণাটকের বিজেপি সরকার বিদ্যালয়ে পোশাকসংক্রান্ত নির্দেশ জারি করে জানায়, যেখানে পোশাক বিধি আছে, সেখানে তা মানতে হবে। যেখানে নেই, সেখানে এমন কিছু পরা যাবে না, যাতে শিক্ষালয়ের পরিবেশ, শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভারসাম্য নষ্ট হয়। রাজ্য সরকারের দাবি, ওই নির্দেশ সাম্প্রদায়িক নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ। রাজ্য সরকার বিদ্যালয়ে পোশাকবিধির বাইরে হিজাবের মতো গেরুয়া উত্তরীয়ও নিষিদ্ধ করে।
ওই সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু মুসলিম ছাত্রী হাইকোর্টে নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হাইকোর্ট সেই মামলা খারিজ করে সরকারি নির্দেশ বহাল রাখেন। রায়ে বলা হয়, হিজাব পরা ইসলামে অপরিহার্য নয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন মুসলমান ছাত্রীরা। শুনানির সময় এ কথাও বলা হয়েছিল, এই নিষেধাজ্ঞা মুসলমান নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মুসলমান নারীদের মধ্যে শিক্ষার যে বিকাশ ঘটছে, এই নির্দেশ তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অনেকেই পড়া শেষ না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাচ্ছেন।