সমন্বয়কদের নির্বাচন

বিএনপির ঘাটিতে লড়বেন আসিফ মাহমুদ

গোলাম রাব্বানী

মার্চ ৬, ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম

বিএনপির ঘাটিতে লড়বেন আসিফ মাহমুদ

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অপ্রতিরোধ্য ভূমিকা রেখেছে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। আয়নাঘরে বন্দী, ডিবি কার্যালয়ে বন্দী থাকার পরও তার সিদ্ধান্ত টলাতে পারেনি কেউ। এদিকে তার ভিডিওবার্তা লং মার্চ টু ঢাকা ৬ তারিখ নয়, আগামীকাল। এই ঘোষনার মাধ্যমেই অভ্যুত্থানের মোমেন্টামটি ধরতে পারে সবাই।

এদিকে নিজ এলাকায় আসিফ মাহমুদের বাবা ঘোষণা দিয়েছেন যে তার ছেলে নির্বাচন করবে। এক ওয়াজ মাহফিলে দোয়াও চান তিনি। ফলে আগামী নির্বাচনে কুমিল্লা ৩ আসন থেকে লড়াই করতে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এই আসনে ৫ বারের নির্বাচিত প্রার্থী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ রয়েছেন। দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরে করছেন প্রচারণাও।

একনজরে কুমিল্লা ৩

কুমিল্লা ৩ আসনটি বর্তমানে কুমিল্লার মুরাদনগর থানা নিয়ে গঠিত। তবে এই আসনের সীমানা পরিবর্তনের পর বর্তমান বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। যদিও তিনি তিন দফা জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে বিএনপিতে যোগদান করার পর এই আসনে তার একক আধিপত্য বজায় রয়েছে।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন ২ জন দায়িত্ব পালন করে এই আসনে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও তিনি এর আগে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অনেকেই কুমিল্লার এই আসনকে কায়কোবাদ বা বিএনপির ঘাটি বলেও মনে করেন। ব্যক্তি জীবন সততা ও কর্মকান্ডের জন্য তার সুনামও রয়েছে। এদিকে ২০১৪ সালে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দীও ছিলেন এক স্বতন্ত্র প্রার্থী। আবার ২০২৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে যায় এই আসনে। ফলে এই আসনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত ছিল সেই সময়। বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্ব অটুট থাকায় এই আসনটি আবারও বিএনপির ঘাঁটি বলে বিবেচিত।

পূর্বে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন

কুমিল্রা ৩ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৭৯। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নেয়ার কারনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র্র ঈগল প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম ৮৩ হাজার ৯৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন পেয়েছেন ৭২ হাজার ১৪ ভোট। 

তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। নৌকা প্রতীকে ১৩৭টি কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ১৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেএম মজিবুল হক ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১২ হাজার ৩৫৮ ভোট।

এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করেনি। বরং আওয়ামী লীগের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ৭৮ হাজার ৬৪৭ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দীও ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আহসানুল আলম কিশোর। তিনি পান ৫৬ হাজার ৩৬৬ ভোট।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এই আসন থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৬ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকার ১ লাখ ৯ হাজার ৮২৩ ভোট পান।

এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন বিএনপির কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এই আসন থেকে ১ লাখ ৭ হাজার ৫১১ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ৮৩ হাজার ৩০১ ভোট পান।

তবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন। তবে তখন তিনি জাতীয় পার্টি হয়ে লাঙল প্রতীক নিয়ে জয় লাভ করেন। কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এই আসন থেকে ৫৩ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ৫০ হাজার ৬৩ ভোট পান।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৬ হাজার ৩৮০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন বিএনপি প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৭৯৭ ভোট। তবে সেবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৯৬৩ ভোট।

আসিফ মাহমুদের বেড়ে ওঠা

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আসিফ মাহমুদ ঢাকার তেজগাঁও থানার নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। তিনি আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কলেজটির বিএনসিসি ক্লাবের প্লাটুন সার্জেন্ট ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

আসিফ ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। এরপরে ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে রাজনীতি শুরু করেন। ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আসিফের নেতৃত্বে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পদত্যাগ করে। ২০২৩ সালে ৪ অক্টোবর গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সূচনার পর সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পান তিনি।

বর্তমানে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। ৯ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।

কুমিল্লা ৩ আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসেবে বিবেচিত। মূলত বিএনপির প্রার্থী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের একক নৈপূণ্যে এখানে ভিন্ন মত খুব বেশি গড়ে ওঠেনি। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলেও সে সব নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনের প্রভাব রয়েছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরাও স্বীকার করেন। ফলে আসিফ মাহমুদের জন্য এই আসনে জয় লাভ করার জন্য বেশ কাঠখড় পোহাতে হবে।

Link copied!