সমন্বয়কদের নির্বাচন

আরিফুল আদিবের আসনে বিভক্ত বিএনপি

গোলাম রাব্বানী

মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম

আরিফুল আদিবের আসনে বিভক্ত বিএনপি

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আগ থেকেই দেশে বিভিন্ন আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতৃত্বে ছিলেন আরিফুল ইসলাম আদীব। সীমান্ত হত্যা থেকে শুরু করে দুই দফা কোটাবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্বেই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছিল শক্ত প্রতিরোধ। জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাবার পর এবার জাতীয় রাজনীতির দিকে চোখ তার। বরিশাল ৪ আসন থেকে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছেন আরিফুল ইসলাম আদীব।

তার আসনে এই মুহুর্তে বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। চাঁদাবাজি, জমি দখল ও বালু উত্তোলনের অভিযোগ নিয়ে একে অপরকে দোষারপ ও দলীয় কোন্দল বাড়ছেই। সব মিলিয়ে বিভক্ত বিএনপিই আরিফুল আদীবের সবচেয়ে বড় বাধা।

বরিশাল ৪

বরিশাল ৪ আসনটি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা ও হিজলা উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৪টি নির্বাচনে তিনবার বিএনপি ও একবার আওয়ামী লীগ জয় লাভ করেন। তবে এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন বেশি। ৯১ নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিল জামায়াতের প্রার্থীরা। জামায়াত ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা ও প্রচারণাও শুরু করেছে। এদিকে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র দলের সভাপতি রাজিব আহসান এই আসনে প্রচারণা শুরু করেছেন। অপরদিকে এই আসনে বিএনপির সর্বশেষ সংসদ সদস্য মেজবাউদ্দিন ফরহাদ এই আসনে অনেকটাই ব্যাকফুটে। তিনি প্রকাশ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রচারণা দেখা যায়। 

ভোটের চিত্র

বরিশাল ৪ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২২৭। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নেয়ার কারনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথ ঈগল প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। যদিও তিনি এর আগে আওয়ামী লীগে থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ নির্বাচনে পঙ্কজ নাথ পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৭ হাজার ৬৭৫ ভোট।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পঙ্কজ নাথ জয় লাভ করেন। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৩৫০ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী নূরুর রহমান জাহাঙ্গীর পেয়েছেন ৯ হাজার ১৯ ভোট।

এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঙ্কজ নাথ জয় লাভ করেন। তিনি পান ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনএফ প্রার্থী আঞ্জুমান সালাউদ্দিন পান ৫ হাজার ৬২৯ ভোট।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মেজবাউদ্দিন ফরহাদ এই আসন থেকে ৯২ হাজার ৫৫৬ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মইদুল ইসলাম পান ৮৮ হাজার ১৮৪ ভোট।

এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির আবুল হোসাইন। তিনি এই আসন থেকে ৬৬ হাজার ৯১ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহসিন শিকদার ২২ হাজার ৫০২ ভোট পান।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী বিএনপির আবুল হোসাইন এই আসন থেকে ৫০ হাজার ৮৩০ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহসিন শিকদার ২২ হাজার ৫৫৬ ভোট পান।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহসিন শিকদার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাহমুদ হোসেইন আল মামুন ১৬ হাজার ৯৪৩ ভোট পান।

আদীবের জন্ম

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের ছেলে আদীবের ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আদীবের সাংগঠনিক পথচলা শুরু। ২০১৯ সালে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ছিলেন। ২০২৩ সালে ১৬ ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ের গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

তিনি কয়েকবার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১৯ সালে ডাকসু ভবনে তার ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের সংগঠক হিসেবেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

পেশাগত জীবনে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ করেছেন আদীব। ২০২০ সালের পর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট ও মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি।বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও রয়েছেন তিনি।

আদীবের বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও মা গৃহিণী। ২০১১ সালে বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্নের পর ভর্তি হন ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হন আদীব।

বরিশাল ৪ আসনটি কোন রাজনৈতিক দলের একক কর্তৃত্ব থাকেনি। স্থানীয় সরকারের ভাল প্রভাব লক্ষ করা যায় এই আসটিতে। এদিকে বিএনপির সমর্থক থাকার পরপরও জামায়াতে ইসলামীও এই আসন ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে বরিশাল-৪ আসনে অধ্যাপক আবদুল জব্বারকে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণাও শুরু করেছে দলটি। তবে বিএনপির অন্তকোন্দল খুব জটিল না হলে আরিফুল ইসলাম আদীবের লড়াইটা বিএনপি প্রার্থীর সাথে হবে।

Link copied!