ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ হাসনাত আব্দুল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিরোধ, ডিবি অফিসে অবরুদ্ধ থাকার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্লকেডের সময়ে প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েও আলোচিত-সমালোচিত হন। তবে সব মিলিয়ে তার দুঃসাহসিক কর্মকান্ডের জন্যই প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলের হয়ে কুমিল্লা ৪ আসনে নির্বাচন করবেন বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
একনজরে কুমিল্লা ৪
কুমিল্লা ৪ আসনটি বর্তমানে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে ১৯৯১ থেকে টানা তিনদফা বিএনপি প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাজেদা আহসান বিএনপির হয়ে নির্বাচনে লড়াই করেন। তবে তিনি পরাজিত হন। বর্তমানে মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর ছেলে রিজভি উল আহসান মুন্সী মনোনয়নের লড়াইতে এগিয়ে আছেন। ফলে ধারণা করা যায় যে, রিজভি উল মুন্সীর সাথেই নির্বাচনী লড়াই হবে হাসনাত আব্দুল্লাহর।
এই আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাদেও দুই দফা স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিল। যদিও তারা আওয়ামী লীগের নেতাই ছিলেন। শেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনেও স্বতন্ত্রপ্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হন। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন ৪ জন দায়িত্ব পালন করে এই আসনে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী তিন মেয়াদে নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচন তার ছেলে রিজভি উল মুন্সী বেশ জোরেসোরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। এদিকে ২০১৪ সালে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি মার্কা নিয়ে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ তে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হন।
বিভিন্ন সময়ে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন
কুমিল্লা ৪ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯১। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা মো. আবুল কালাম আজাদ ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৮০৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী দু’বারের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল পেয়েছেন ৮১ হাজার ২৫৭ ভোট।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাজী মো. ফখরুল নৌকা পেয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৫৮ ভোট।
এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাজী মো ফখরুল হাতি প্রতীক নিয়ে জয় লাভ করেন। তিনি ভোট পান ৩২ হাজার ৮০৩ টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী লাঙল প্রতীক নিয়ে ইকবাল হোসন রাজু পান ২৮ হাজার ৫৩৬ ভোট।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম গোলাম মোস্তফা পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৭ ভোট। বিএনপি প্রার্থী মাজেদা আহসান পেয়েছেন ৮১ হাজার ৬৬৫ ভোট।
এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী মনজুরুল আহসান মুন্সী। তিনি ৯২ হাজার ৩২৯ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী পান ৫৮ হাজার ৮৭৭ ভোট। যদিও ফখরুল মুন্সী আগে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন বিএনপির প্রার্থী মনজুরুল আহসান মুন্সী। সে সময় তিনি ভোট পান ৪৬ হাজার ১৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী লাঙলের প্রার্থী এ বি এম গোলাম মোস্তফা ৩৯ হাজার ২০৯ ভোট।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭ হাজার ১৩৯ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন বিএনপি প্রার্থী মনজুরুলে আহসান মুন্সী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিলেন ন্যাপ-মোজাফফর দলের নেতা মোজাফফর আহমেদ ২৬ হাজার ২৯৯ ভোট পান।
হাসনাত আবদুল্লাহর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার দেবিদ্বার সরকারি রেয়াজ উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৪ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং পারুয়ারা আবদুল মতিন খসরু কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। প্রতিবাদী হাসনাত আবদুল্লাহ ২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্টার ভবনে ভোগান্তি নিরসনে ৮ দফা দাবি নিয়ে অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বর্তমানে তিনি নবগঠিত পার্টি জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দষিণাঞ্চল)-এর দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও এক জার্সি পড়ে শেখ হাসিনার পতন করানোর বিষয়টিতেও তিনি আলোচিত হন। ২০২৪ সালের ১২ অক্টোবর তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মূলত কুমিল্লা ৪ আসনটি আসনটি বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর একক কর্তৃত্ব ছিল। পরবর্তীতে বিএনপি অন্য প্রার্থী দিলে সেখানে তেমন সফল হতে পারেনি। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দ্বন্দ ও বিভাজন থাকার পাশাপাশি কুমিল্লার আওয়ামী লীগের নেতা বাহারউদ্দিন বাহারের বলয়ে থাকা নেতারাই স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচিত হন।
বর্তমানে মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর ছেলে রিজভিউল আহসান মুন্সী মনোনয়নের লড়াইতে এগিয়ে আছেন। বয়সে তরুন এই নেতা ইতোমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রচারণা ও দাতব্য কাজেও তিনি মনোনিবেশ করছেন। ফলে কুমিল্লা ৪ আসনে হাসনাত আব্দুল্লাহ সামনে কঠিন পরীক্ষা রয়েছে।