সমন্বয়কদের নির্বাচন

কোন আসনে লড়বেন ‘মাস্টারমাইন্ড’ মাহফুজ আলম?

গোলাম রাব্বানী

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫, ১২:১৬ পিএম

কোন আসনে লড়বেন ‘মাস্টারমাইন্ড’ মাহফুজ আলম?

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় পাওয়া মাহফুজ আলম নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জে গিয়েছেন গত ২৫ জানুয়ারি। গণসংবর্ধনায় বিপুল লোক সমাগমের ফলে অনেকেই নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর ১ আসনে তার নির্বাচন করা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে এখন দলটির কোন শক্ত প্রার্থী নেই। দলীয় কোন্দল থেকে শুরু করে নানা কারণে বিভিন্ন নেতাদের বহিষ্কারের ফলে মাহফুজ আলমের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দি আপাতত নেই।

‘বিএনপির ঘাঁটি’ লক্ষ্মীপুর ১ আসনের বর্তমান চিত্র

মাহফুজ আলমের নির্বাচনী আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা চারটি নির্বাচনেই বিএনপির প্রার্থী জিয়াউল হক জিয়া ও নাজিম উদ্দিন আহমেদ জয়লাভ করেন। জিয়াউল হক জিয়া স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বর্তমানে এই আসনে অনেকটাই ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছে দলটি। সর্বশেষ ২০২২ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য নাজিম উদ্দিন আহমেদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফলে দলটির এখন কোন চূড়ান্ত প্রার্থী না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে অনেক কোন্দল রয়েছে।

বর্তমানে বিএনপির কিংবা তাদের দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত নয়। ২০১৮ সালে বিএনপির হয়ে এই আসনে লড়েছেন বর্তমান এলডিপির মহসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। এছাড়া বিএনপির ২০১৮ সালের নমিনেশন চাওয়া সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ভিপি আব্দুর রহিমকেও করা হয়েছিল বহিষ্কার। বর্তমানে তিনি দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে উপস্থিত থাকলেও দলটির পক্ষ থেকে কাউকেই গ্রিন সিগনাল দেয়া হয়নি। এদিকে বর্তমানে উপজেলার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক মজু, ভিপি বাহারসহ অর্ধ ডজন নেতারা এই আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা পলাতক থাকায় ও এই আসনে বিএনপির মধ্যে বিভাজন থাকায় মাহফুজ আলমের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দি নেই। তবে আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে তকমা পাওয়ায় যে-কোন প্রার্থী আসলেই বিএনপির নেতা কর্মীরা এক হয়ে কাজ করবে জানিয়েছে তৃণমূলরা। 

বিভিন্ন মেয়াদে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন

লক্ষ্মীপুর ১ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৪ টি। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নেয়ার কারনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার খান ৪০ হাজার ৯৪ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান পবন পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ১৫৬ ভোট।

তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে বিএনপি জোটের প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেন সেলিমকেও হারিয়েছিলেন আনোয়ার খান। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার খান ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৮ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। বিপরীতে বিএনপির পক্ষ থেকে এলডিপির বর্তমান মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম পেয়েছিলেন মাত্র ৩ হাজার ৮৯২ ভোট।  

এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে তরিকত ফেডারেশনের নেতা এম এ আউয়াল ৪৯ হাজার ৬৫৬ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ২১ হাজার ৮৫৯ ভোট পান।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আহমেদ ৭৪ হাজার ২৭৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহজাহান ৫৪ হাজার ৯৪৬ ভোট পান। এর আগে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাজিম উদ্দিন জয় লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন। তবে বর্তমানে তিনি বহিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছেন। কিন্তু তার সমর্থন বেশ।

এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন ব্যরিস্টার জিয়াউল হক জিয়া। তিনি ৬৮ হাজার ৯৯০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহাজাহান পান ৩২ হাজার ৪৩৭ ভোট।  

এর আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন জিয়াউল হক জিয়া। সে সময় তিনি ভোট পান ২৮ হাজার ৫৭৭। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম ভোট পান ১৭ হাজার ২৪৪।

১৯৯১ সালের ৫ ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ হাজার ৬৭৮ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন বিএনপি প্রার্থী জিয়াউল হক জিয়া। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি জামায়াতে ইসলামির প্রার্থী লুৎফর রহমান পেয়েছিলেন ১১ হাজার ২৪৮ ভোট।

‘মাস্টারমাইন্ড’ মাহফুজের বেড়ে ওঠা

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজের জন্ম ১৯৯৫ সালের ৩১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার, রামগঞ্জ উপজেলার, ইছাপুর গ্রামে। তিনি চাদঁপুর জেলার গল্লাক দারুচ্ছুন্নাত আলিম মাদরাসা থেকে এসএসসি (দাখিল) এবং তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে এইচএসসি (আলিম) পাস করেন। তিনি ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মাহফুজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনু্ঠানে মুহাম্মদ ইউনূস তাকে ২০২৪ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের এর ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে অভিহিত করেন।

জোট গঠনের আগে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হতো। তবে জোট গঠনের পর বিএনপির একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় থাকে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর ২ আসনে খালেদা জিয়া নির্বাচন করায় তার প্রভাবও এই আসনে পরে বলে অনেকে মনে করেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যায় বর্তমানে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এদিকে জামায়াত ইসলামি প্রাথমিক প্রার্থীও বাছাই করেছে।

Link copied!