সমন্বয়কদের নির্বাচন

নাহিদ ইসলাম কোন আসনে লড়বেন?

গোলাম রাব্বানী

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম

নাহিদ ইসলাম কোন আসনে লড়বেন?

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত রামপুরা-বনশ্রী এলাকা। ১৭ জুলাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয় তখন অনেকেই ভেবেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ত সেখানেই শেষ। কিন্তু ১৮ জুলাই ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে আন্দোলন বেগবান হয় রামপুরা-বনশ্রী এলাকা থেকেই। আর এই এলাকাতেই নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকার থেকে সদ্য পদত্যাগ করা উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের। বর্তমানে ঢাকা ১১ আসনে বারবার সীমানা পরিবর্তন ও নির্দিষ্ট কোন নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় নাহিদ ইসলামের শক্ত প্রতিদ্বন্দিও নেই এই আসন থেকে।

ঢাকা ১১ আসনের সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী যারা

ঢাকা ১১ আসনটি বর্তমানে রামপুরা, বাড্ডা, ভাটারা, হাতিরঝিল থানার একাংশ ও ৯ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। তবে ঢাকা ১১ আসনটির সীমানা বারবার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া বিএনপি হোক কিংবা আওয়ামী লীগ কোন দলেরই শক্ত ও স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি এই আসন ঘিরে। জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সব দলই এই আসন থেকে বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছিল। এছাড়া তিনবার সীমানা পরিবর্তনের ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও স্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। তবে নাহিদ ইসলাম এই আসন থেকে নির্বাচন করলে তার সামনে শক্ত প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। বিএনপির নেতা এম এ কাইয়ুম এই আসনে একমাত্র প্রতিদ্বন্দি হিসেবে বিবেচিত।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন ৫ জন দায়িত্ব পালন করে এই আসনে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও মূলত এটাকে বিএনপির ঘাঁটি বলা যায় না। ২০০১ সালে বিএনপির হয়ে এস এ খালেক নির্বাচিত হলেও তিনি এর আগে এই আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রয়াত এই নেতার জনপ্রিয়তা থাকলেও সেটা দলীয় রাজনীতির বিস্তারে কাজ করেনি। 

এদিকে ২০১৪ সালে এই আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। আর এই আসনে নির্বাচন করা বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন এখন রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি এম এ কাইয়ুম এই আসনের হট ক্যান্ডিডেট। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও দাতব্য কাজসহ রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। 

কোন মেয়াদে কারা নির্বাচিত হয়েছিলেন

ঢাকা ১১ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৫ টি। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নেয়ার কারণে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ওয়াকিল উদ্দিন পেয়েছেন ৮২ হাজার ৯৬৪ ভোট। যা ঢাকার ঘোষিত ফলাফলের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির শামীম আহমেদ পেয়েছেন ২ হাজার ৭১৪ ভোট।

তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম রহমতুল্লাহ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৩ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। নিকটতম বিএনপির শামীম আরা বেগম ৫৪ হাজার ৮৫৫ ভোট।

এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে নৌকা প্রতীকে এ কে এম রহমতুল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয় লাভ করেন।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই আসন থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। যদিও তখন এর সীমানা ভিন্ন ছিল। বিএনপি প্রার্থী শাহাব উদ্দিন ৭৩ হাজার ৮৭০ ভোট পান। যদিও শাহাব উদ্দিন ২০১৯ সালে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।

এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন এস এ খালেক। এসময়ে বর্তমান থেকে নির্বাচনের সীমানা ভিন্ন ছিল। আর এস এ খালেক এই অঞ্চল থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে ৮৬ ও ৮৮ সালে নির্বাচিত হন। তবে এই নির্বাচনে বিএনপির হয়ে তিনি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৫ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬০ ভোট পান।

তবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন কামাল আহমেদ মজুমদার। সে সময় তিনি ভোট পান ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৬ টি। তখন বিএনপির প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা পান ১ লঅখ ২ হাজার ৩০৭ ভোট।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৯ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন বিএনপি প্রার্থী হারুন রশিদ মোল্লাহ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. কামাল হোসেন। তখন তিনি পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ৭৫০ ভোট। পরবর্তীতে নির্বাচনের ফল নিয়ে ড. কামাল হোসেন ও শেখ হাসিনার দ্বন্দ বাড়ে। ৯২ সালে হারুন রশিদ মোল্লাহ মৃত্যু বরণ করলে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ মহসিন ৮০ হাজার ২৭৬ ভোট পান। কিন্তু ড. কামাল হোসেনকে মনোনয়ন না দিয়ে আওয়ামী লীগ কামাল আহমেদ মজুমদারকে প্রার্থী করে। সেখানে তিনি ৭৭ হাজার ৬৫১ ভোট পান।

নাহিদ ইসলামের উত্থাণ  

নাহিদ ইসলামের ডাকনাম ফাহিম। তার জন্ম ১৯৯৮ সালে ঢাকায়। বাবা শিক্ষক ও মা গৃহিনী। ২০১৪ সালে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসি পাস করেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ২০২২ সালে অনার্স পাস করেন তিনি। আন্দোলনকারী ছাড়াও তার রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন। ভারতের আগ্রাসন নিয়ে একাই ক্যাম্পাসে মাইক ভাড়া করে মিছিল করছেন।

বর্তমানে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ৯ আগস্ট ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।

মূলত ঢাকা ১১ আসনটির সীমানা বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া মিরপুর এই আসনের অংশ থাকায় মিরপুর থেকেই এই আসনের জনপ্রতিনিধি গড়ে উঠেছে। কিন্তু দুই দফা সীমানা পরিবর্তনের পর রামপুরা, ভাটারা ভিত্তিক নেতৃত্ব কম দেখা যায়। ফলে এই আসনে শক্ত প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। জুলাই বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল রামপুরা-বনশ্রী। আর সেই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে কি নাহিদ ইসলাম ভোটের রাজনীতিতে বাজিমাত করতে পারবে। তা সময়ই বলে দিবে।

Link copied!