সমন্বয়কদের নির্বাচন

কোন আসনে লড়বেন সারজিস আলম?

গোলাম রাব্বানী

মার্চ ৩, ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম

কোন আসনে লড়বেন সারজিস আলম?

সারজিস আলম। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নামের একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে গঠিত এই পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ সারজিস আলম।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি থেকে এর শীর্ষ নেতারা নির্বাচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে সারজিস আলম অন্যতম। তিনি ইতোমধ্যে পঞ্চগড়ে এক জনসভায় বলেছিলেন যে জনগণ চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন।

পঞ্চগড় ১

সারজিস আলমের নির্বাচনী আসন পঞ্চগড় ১। আসনটি পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর উপজেলা, তেতুলিয়া উপজেলা ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিএনপির শাসনামলে দুই জন স্পিকারই ছিলেন এই আসন থেকে। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে এখানকার রাজনীতি বরবারই গুরুত্ব বহন করছে। তিস্তা নদীর প্রবেশমুখ হওয়ায় তিস্তা চুক্তি নিয়ে আবারও সরগরম হচ্ছে রাজনীতি।

সারজিস আলমের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দি

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যরিস্টার নওশাদ জমির। যিনি ইতোমধ্যে ২০১৮ সালে বিএনপির হয়ে এই আসনে লড়েছেন। এছাড়া তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের পুত্র। যিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করেছিলেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা পলাতক থাকায় ও এই আসনে বিএনপির মধ্যে কোন বিভাজন না থাকায় সারজিস আলমই সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দি। 

বিগত সময়ে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন

পঞ্চগড় ১ আসনে ২০২২ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৬। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নেয়ার কারণে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাইমুজ্জামান ভুঁইয়া মুক্তা ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৭২ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা আনোয়ার সাদাত সম্রাট পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ২১০ ভোট।

তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্রটি ছিল ভিন্ন। সেবার বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের পুত্র ব্যরিস্টার নওশাদ জমির অংশ নেয়। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাজহারুল হক প্রধান ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৮ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। কিন্তু নওশাদ জমির ১ লাখ ৩৩ হাজার২ হাজার ৫৩৯ ভোট পান। এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি ফল প্রত্যাখান করে।

এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে জাসদ নেতা নাজমুল হক প্রধান ৪৬ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সালেক ৩৭ হাজার ৯০৮ ভোট পান।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাজহারুল হক প্রধান ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ১ লাখ ৭ হাজার ৭২৫ ভোট পান।

এর আগে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি ৮১ হাজার ৭০২ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম সুজন ৭০ হাজার ১৬৪ ভোট পান। যদিও ২০০১ সালের পর থেকে নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় ২ আসন থেকে নির্বাচন করে আসছেন।

এর আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। সে সময় তিনি ভোট পান ৫৭ হাজার ৪৩৩। আর নুরুল ইসলাম সুজন পান ৪৮ হাজার ১২ ভোট।

১৯৯১ সালের ৫ ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ হাজার ৬৭৮ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন বিএনপি প্রার্থী মির্জা গোলাম হাফিজ। যিনি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৩৮ হাজার ৬০৮ ভোট।

সারজিস আলমের বৃত্তান্ত

সারজিস আলম ২ জুলাই ১৯৯৮ সালে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর ২০১৭ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে অমর একুশে হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সদস্য পদে জয়লাভ করেছিলেন।তাছাড়া তিনি নানা পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিতার্কিক হিসাবে অংশ নেন। ক্যাম্পাসে তিনি ছাত্রলীগের সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও নেতা। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির মুখ্য সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল)-এর দায়িত্ব পালন করছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যায় বর্তমানে জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যরিস্টার নওশাদ জমির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমই আগামী নির্বাচনে পরিচিত মুখ। তবে নওশাদ জমির ও সারজিস আলমের লড়াইটাই বেশি হবে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

Link copied!