রবিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আকবর। অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। চিকিৎসার পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় করেছিলেনও। ভারতে যাওয়ার কথাও ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য ২০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন।
'তোমার হাতপাখার বাতাসে' গানটি দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী আকবর। সেই গানের মিউজিক ভিডিওতে আকবরের স্ত্রী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা।
আকবরের মৃত্যুর খবর পেয়ে পূর্ণিমা বলেন, ‘অনেকদিন থেকে অসুস্থ ছিলেন আকবর ভাই। আল্লাহ তাকে মুক্তি দিয়েছেন। দোয়া করি, আল্লাহ তাকে যেন জান্নাতবাসী করেন।’
আকবরের সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণ করে জনপ্রিয় এই নায়িকা বলেন, ‘আমার আকবর ভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত কখনও কাজ হয়নি। ২০০৩ বা ২০০৪ সালে তার সঙ্গে একটি মাত্র কাজ করা হয়েছে। মাত্র একটি মিউজিক ভিডিও করেছি তার সঙ্গে। আকবর ভাই সেসময়ে ইত্যাদিতে গান করে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।’
গানটিতে কাজ করা কিভাবে সে নিয়ে পূর্ণিমা বলেন, ‘হানিফ সংকেত স্যার তাকে দিয়ে একটি মৌলিক গান করালেন। সে সময় হানিফ সংকেত স্যারের মাধ্যমেই আকবর ভাইয়ের মিউজিক ভিডিওতে আমার কাজ করা। সেটাও অনেক জনপ্রিয়তা পায়, অনেক সাড়া ফেলে। তারপর আর কখনও তার সঙ্গে আমার কাজ করা বা কথা বলাও হয়নি।’
আকবরের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে পূর্ণিমা জানান, ‘যেহেতু সেটা তার প্রথম কাজ ছিল, তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ইতস্তত বোধ করতেন, লজ্জাও পেতেন। তবে কাজের সময় আমি তাকে সহযোগিতা করেছি এবং হানিফ সংকেত স্যারও সাপোর্ট দিয়েছেন কাজটি সম্পন্ন করতে। সবশেষে ভালো একটা কাজ হয়েছিল এবং কাজটি দেশব্যাপী দর্শক মহলে অনেক জনপ্রিয়তা পায়।’
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'র মাধ্যমে পরিচিতি পান আকবর। কিশোর কুমারের 'একদিন পাখি উড়ে' নতুন করে গেয়েছিলেন আকবর আলী গাজী। সবার কাছে তিনি আকবর নামে পরিচিত। হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি'তে এই গান তাকে আলোচনায় নিয়ে আসে।
এরপর 'তোমার হাতপাখার বাতাসে' গানটি দেশ-বিদেশের দর্শক-শ্রোতার কাছে তাকে পরিচিত করে তোলে। এর আগে তিনি যশোরে বিভিন্ন স্টেজ শোতে গান গাইতেন।
গায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরে।
গত বুধবার লাইফ সাপোর্টে চলে যান তিনি। তার আগে গত শনিবার থেকে আইসিইউতে ছিলেন। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি দুই বছর ধরে জন্ডিস, কিডনিতে সমস্যা, রক্তের প্রদাহসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। আকবরের দুই কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শরীরে পানি জমে তাঁর ডান পা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গেল মাসে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই পা কেটে ফেলা হয়েছিল। পা কাটার পর বেড়ে যায় তাঁর কিডনি ও লিভারের সমস্যা। গত জানুয়ারি থেকে বিছানাবন্দি জীবন শুরু হয়েছিল তাঁর।