সদ্য সমাপ্ত ৯৪তম অস্কার আসরে সঞ্চালক মার্কিন কমেডিয়ান ক্রিস রককে চড় মেরে তুমুল সমালোচনার মধ্যে অবশেষে ফিল্ম অ্যাকাডেমি থেকে পদত্যাগ করেছেন অভিনেতা উইল স্মিথ। গত সোমবারের চড় মারার ঘটনা নিয়ে অস্কার একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিন্দা জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল।
নিজের অপরাধ স্বীকার করে শুক্রবার তিনি ফিল্ম অ্যাকাডেমি (অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্স) থেকে পদত্যাগ করেন। এক বিবৃতিতে উইল স্মিথ বলেন, আমার কৃতকর্মের জন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত।
আসলে বিষটি ছিল খুবই অমানবিক, জঘন্য ও ক্ষমার অযোগ্য। এজন্য যে কোনো শাস্তি আমি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি।
ক্রিস রককে চড় মারার পর অবশ্য তার কাছে ক্ষমা চান উইল স্মিথ। স্থানীয় সময় সোমবার ইনস্টাগ্রামে স্মিথ লিখেন, “আমি প্রকাশ্যে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি, ক্রিস। আমি সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিলাম এবং আমি ভুল করেছি।”
ইনস্টাগ্রামে স্মিথ লিখেন, “আমি প্রকাশ্যে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি ক্রিস। আমি সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিলাম এবং আমি ভুল করেছি। আমার কর্মকাণ্ডের জন্য আমি লজ্জিত। আমি যে ধরনের মানুষ হতে চাই, এটা তার পরিচয় নয়।”
স্মিথ আরও লিখেন, ‘হিংসা মাত্রই ক্ষতিকারক এবং ধ্বংসাত্মক। গত রাতের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে আমার আচরণ গ্রহণযোগ্য ছিল না, ক্ষমাহীন অপরাধ করেছি। কৌতুক আমাদের পেশার অংশ। কিন্তু জাডার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মজা করা আমার পক্ষে সহ্য কঠিন ছিল এবং আমি আবেগপ্রবণ হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম, যা ঠিক হয়নি।’
স্মিথ লেখেন, “আমার এই ব্যবহার বিশ্ব জুড়ে যারা দেখেছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। ক্ষমাপ্রার্থী অ্যাকাডেমি, অনুষ্ঠানের প্রযোজক এবং সব অংশগ্রহণকারীর কাছে। উইলিয়ামস পরিবার এবং কিং রিচার্ড পরিবারের কাছেও অপরাধ কবুল করছি। অস্কারের আলোকজ্জ্বল মঞ্চে আমার এ হেন আচারণ একটি দাগ ফেলে গিয়েছে। যা ক্ষমাহীন অপরাধ।”
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের ডলবি থিয়েটারে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৯৪তম আসর। এবারের অস্কারে ‘কিং রিচার্ড’ ছবির রিচার্ড উইলিয়ামস চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান উইল স্মিথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন কমেডিয়ান ক্রিস রক।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনার ফাঁকে ফাঁকে রসিকতা করছিলেন সঞ্চালক ক্রিস।একপর্যায়ে স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেটকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমি জি আই জেন-এর সিক্যুয়েলের অপেক্ষায় রয়েছি।’ তার এমন রসিকতায় বেশ চটে যান স্মিথ। অভিনেতা নিজের আসন ছেড়ে মঞ্চে গিয়ে সঞ্চালকের গালে সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেন। তবুও স্মিথের রাগ কমেনি। নিজের আসন থেকে চিৎকার করে বলে, ‘তোমার এসব নোংরা কথা থেকে আমার স্ত্রীকে দূরে রাখো।’
১৯৯৭ সালের ‘জি আই জেন’ সিনেমার নায়িকার মাথায় চুল কম থাকা নিয়ে সে সময় বেশ চর্চা হয়েছিল। স্মিথের স্ত্রী জাডার মাথাতেও চুল কম। আর এজন্যই রসিকতা করে তাকে ‘জি আই জেন ২’-এর নায়িকা হিসেবে ইঙ্গিত করেন সঞ্চালক ক্রিস।
অ্যালোপেশিয়া রোগে আক্রান্ত জাডা। এই রোগের হলে মাথার চুল পড়ে যায়। স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে রসিকতা মানতে পারেননি স্মিথ। আর তাই তিনি মেজাজ হারান।
এ ঘটনায় চমকে যান আয়োজক ও উপস্থিত সাংবাদিকেরা। শুরুতে ঘটনাটিকে সাজানো বলে মনে করলেও দ্রুত সবাই বুঝে ফেলেন যে এটা পূর্বপরিকল্পিত নয়, বরং এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।