প্রতিটি মানুষের জীবনেই এমন কিছু সময় আসে যখন সে জীবনের গভীর দর্শনকে আরো জোরালোভাবে অনুভব করতে শেখে। চিত্রনায়িকা পরী মণি এই ক’দিনে বোধ হয় সেই গভীর জীবনবোধকেই স্পষ্ট করে আবিষ্কার করেছেন। আর তা হল এই যে, জীবন ‘দুঃখের মতো সুন্দর’।
পরী মণির জন্য গত দুই দিন ছিল এক অনিবার্য শোকের যাত্রা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন কাছের মানুষকে হারিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার ভোর ৫টায় ঢাকা-ফরিদপুর মহাসড়কের ভাঙ্গায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পরীমনির ‘প্রাক্তন স্বামী’ ইসমাইল হোসেন জমাদ্দার। এর একদিন পর শনিবার সন্ধ্যায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন তার প্রথম ছবির পরিচালক শাহ আলম মন্ডল।
পরিচালক শাহ আলমের হাত ধরে সিনেমায় আসেন পরী মণি। এই পরিচালক তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘ভালোবাসা সীমাহীন’। তার নির্মিত অন্য ছবিগুলো হচ্ছে ‘আপন মানুষ’, ‘ডনগিরি’ এবং ‘লকডাউন লাভ স্টোরি’।
শনিবার বিকেলের দিকে পরী মণি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, ‘নিয়তির ডাকে দিলে যে সাড়া ফেলে গেলে শুধু নীরবতা। যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কী যন্ত্রণা!’ পরী মণির এই বিষাদময় পোস্টের সঙ্গে অনেকেই দুর্ঘটনায় ইসমাইল হোসেন জমাদ্দারের মৃত্যুর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।
এরপর রবিবার আবারও ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেন পরী। তিনি লেখেন: “ওস্তাদ, আপনিও চলে গেলেন! আজকের দিনেই আমার নানা চলে গেলো। আপনি ও... মাফ করে দিয়েন, ওস্তাদ। আমাদের শেষ দেখা হলোই না।”
এক বছর আগে ঠিক এই দিনেই নানা শামসুল হক গাজীকে হারিয়েছেন তিনি। আর এরই মধ্যে পরী মণির প্রথম পরিচালক চলে গেলেন। সেই ক্ষত এখনও শুকায়নি। এর মধ্যেই আবার হারাতে হলো তার প্রথম পরিচালকের মতো একজন গুরুজনকে।
দুই দিনের ভেতর এতো শোক সামলে নেওয়া সহজ নয়। কিন্তু এইসব বিচ্ছেদের মাঝেও পরী মণি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের গভীর এক সত্য। তার কণ্ঠে উঠে এসেছে এই মর্মস্পর্শী অনুভূতি: “জীবন দুঃখের মতো সুন্দর।”
ফেসবুকের একটি পোস্টে দেখা যায় নানার মৃত্যুবার্ষিকীতে পরী মণি গ্রামের বাড়িতে গেছেন। সেখানে রান্না করা অবস্থায় একটা ভিডিও শেয়ার করেন পরী, সেখানে ক্যাপশনে লেখা- “জীবন দুঃখের মতো সুন্দর।”
এই সময়টা যেন তার জীবনের নতুন অধ্যায়। একজন মানুষ কীভাবে শোকের ভেতর থেকেও জীবনের সৌন্দর্য খুঁজে নেয়, পরী মণি তার জীবনের মাধ্যমে সেটাই আমাদের দেখাচ্ছেন। “জীবন দুঃখের মতো সুন্দর”—এ কথা যেন তার জীবন-অভিজ্ঞতার ফসল।
ধারণা করা যায়, এমন পরিস্থিতিতে পরীর পরীর সময়টা বেশ বিষাদের সঙ্গে কাটছে, এমনটাই স্বাভাবিক। তবে সময়টা পরীর জন্য কেবল শোকের নয়, বরং এক আত্মোপলব্ধির সময়। বিচ্ছেদ, বেদনা, আর শূন্যতার মাঝেও পরীমনি দাঁড়িয়ে আছেন শক্তভাবে। পরীর কাছে বেদনার গভীরতাই হয়তো জীবনের আসল সৌন্দর্য।