ধর্ষণের অভিযোগ, শাকিব খানের সাথে কথা বলবে শিল্পী সমিতি

বিনোদন প্রতিবেদক

মার্চ ১৭, ২০২৩, ০২:৩০ এএম

ধর্ষণের অভিযোগ, শাকিব খানের সাথে কথা বলবে শিল্পী সমিতি

ঢাকাই সিনেমার নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক প্রযোজক। বুধবার শিল্পী সমিতিতে দায়ের করা ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাকিব খানের সাথে কথা বলা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার।

বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে নিপুণ বলেন, “‘শাকিব খানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি আমরা। বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। এমন ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়।

নিপুণ আরও বলেন, “প্রযোজক রহমত উল্লাহ চারটি সংগঠনে অভিযোগ জানিয়েছেন। কেউ অভিযোগ করা মানে তো দোষী বলা যাবে না। আগে আমরা দেখব বিষয়টি কী। আমরা বিষয়টি নিয়ে শাকিব খানের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করব। অভিযোগকারী এবং শাকিব খান—দু’জনের সঙ্গেই কথা বলব আমরা। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে স্পষ্ট হয়ে তবেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কী করা যায়।”

শিল্পী সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, “আমাদের সভাপতি (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, ইলিয়াস কাঞ্চন) এবং শাকিব দু’জনই বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তারা দেশে আসলে অভিযোগ নিয়ে বসব আমরা।”

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি প্রযোজক রহমত উল্লাহ।

নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ (২০১৭) সিনেমায় অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ (এনএসডাব্লিউ পুলিশ রেফারেন্স নং: ই ৬২৪৯৪৯৫৯) এবং পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতিসাধন, চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করতে অথবা লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে ওই অভিযোগ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে  উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায়  অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে।

শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সাথে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেন নাই। ২০১৭ সালে অপারেশন অগ্নিপথের চিত্রায়নের সময় তিনি যে সকল ক্ষতিকর কাজ করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে দেওয়া হল-

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোন রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন; আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। এই সকল যৌনকর্মীদের মোটা অংকের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো।

৫. একবার তিনি আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করে বসলেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করলেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। (এনএসডাব্লিউ পুলিশ রেফারেন্স নং: ই ৬২৪৯৪৯৫৯) নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান।  

এরপর থেকে শাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন সময যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।’

অভিযোগকারী প্রযোজক বলেন, ধর্ষণের মতো জঘন্য অন্যায় তিনি করেছেন। পতিতালয়ের বিষয়টি আমার অভিযোগে উল্লেখ করেছি। শাকিব খানের মতো এতো বড় তারকার চরিত্র যে এতো নোংরা তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার কাছে শাকিব সম্পর্কে অনেক দালিলিক প্রমাণ আছে। শাকিব খান আমার অনেক আর্থিক ক্ষতি করেছেন। সে যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তবে পর্যায়ক্রমে আমি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটি ২০১৭ সালে শুটিং শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি এর কাজ। কারণ হিসেবে শাকিব খানের অসহযোগিতা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।  

 

এ সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করছিলেন শাকিব খান ও অভিনেত্রী শিবা আলী খান। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে আরো অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, টাইগার রবি প্রমুখ।

Link copied!