টাকার বিনিময়ে নকল সার্টিফিকেট কর্মসূচি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ৮, ২০২২, ০২:৪০ এএম

টাকার বিনিময়ে নকল সার্টিফিকেট কর্মসূচি!

কোনো যোগ্যতার বালাই নেই। দরকার শুধু টাকা। এই টাকা হলেই মেলে এমবিবিএস, বিডিএস, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইনসহ এমফিল, পিএইচডি সার্টিফিকেট! এই সার্টিফিকেট প্রদানকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নুরুল হক সরকার ও তাঁর একজন সহযোগীসহ চারজন ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসককে গ্রেফতারের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। 

ভুয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পরিকল্পক নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনিসহ মোট ছয় জনকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। বুধবার তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের একটি দল। রাজধানীর মালিবাগ, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আশরাফ হোসেন। পরে বৃহস্পতিবার তাঁদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব।

নূরুল হক ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া অন্য পাঁচ ব্যক্তি হলেন— মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সাঈদুর রহমান ওরফে নজরুল, মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ, আমান উল্লাহ এবং দেবাশীষ কুন্ডু।

র‌্যাবের ভাষ্যমতে, এক-দুই বছর নয়, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন বিষয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করছিল প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানটি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন হত্যা, খুনসহ ১৫টি মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজ বাহিনীর প্রধান রিয়াজুল ইসলাম ও তার ৪ সহযোগীও। গ্রেপ্তারের সময় এসময় তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, গুলি, দেশীয় অস্ত্র ও ইয়াবা।

নাম সর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠান খুলে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ১৪৪টি বিষয়ের সার্টিফিকেট দিতেন কথিত উপাচার্য চিকিৎসক নুরুল হক সরকার। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত শত শত ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়েছেন তিনি। বিনিময়ে প্রতিটি সার্টিফিকেটের জন্য নিয়েছেন ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা!

গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্টেশন কার্ড, প্রবেশপত্র, নকল সিল, চারটি ব্যাংকের ভুয়া চেকবই, চটকদার বিজ্ঞাপনের কাটিং, লিফলেট, চিকিৎসাপত্র, ভিজিটিং কার্ড, নবদিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কপি, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, একটি কীবোর্ড ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এই চক্রটি ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে আসছে। তাদের বিজ্ঞাপনে বলা কথিত কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাস, এটির কোনো অস্বিত্ব নেই। চক্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ, হাইকোর্টের জাল রিটের কপি দেখাতো। এমনকি এই প্রতারক চক্রের রোগী দেখার চেম্বার অত্যাধিুনিক উপায়ে সজ্জিত এবং নামফলক সম্বলিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি উল্লেখ করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। 

Link copied!