বাকশালের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে টেনে তুলেছিলেন জিয়া: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৯, ২০২২, ০৯:০৯ পিএম

বাকশালের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে টেনে তুলেছিলেন জিয়া: ফখরুল

বাকশালের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে টেনে তুলেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। এমন মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার সিলেট জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তিনি শুধুমাত্র একজন লে. জেনারেল ছিলেন না। তিনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, সেই মহাপুরুষ যিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামের সময় যখন সমগ্র জাতি দিশেহারা ছিল, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল, যাদের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল, তারা স্বাধীনতার ঘোষণা না করে পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন অথবা ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেই সময় মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে ভেসে উঠেছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। যার ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রায় সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন জিয়াউর রহমান। সেই মুহূর্তে সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সেটা তিনি করেছিলেন বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য। সেই সময় বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত একটি লেখার মধ্যে লিখেছেন, যদি ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হতেন তাহলে এই বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ঘটতো বলা খুব মুশকিল। হয়তো এটা আফগানিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মানুষকে নতুন পরিচিতি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ শুধু একটি দর্শন নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বের দর্শন। আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলি না, আমরা অন্য কোনো জাতীয়তার কথা বলি না। আমরা বলি, আমাদের নেতা যে পথ দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ। এখানে শুধু বাঙালি বাস করে না। অন্য ভাষাভাষির মানুষ, অন্যান্য ধর্মের মানুষ বাস করে। আমাদের চিন্তা-ভাবনা আলাদা।

যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, সংগ্রাম করেছিলাম সেটার মূল লক্ষ্য ছিল আমরা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চাই। এমন ব্যবস্থা চাই, যেখানে আমাদের প্রতিনিধি আমরা নির্বাচন করতে পারবো। আমাদের সমাজ আমরা পরিচালনা করতে পারবো। আমাদের রাষ্ট্র আমরা পরিচালনা করতে পারবো। এখানে সাধারণ মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচবে, মোটা কাপড় পরবে, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশের জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম। দুর্ভাগ্য আমাদের স্বাধীনতার পরপরই আওয়ামী লীগ—যারা প্রতি মুহূর্তে নিজেদের স্বাধীনতার সমস্ত কৃতিত্বের দাবিদার বলে ঘোষণা করে, সেই আওয়ামী লীগ সেদিন থেকেই জাতির সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেছে। তারা অতি দ্রুত জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে তাদের নিজেদের উন্নয়নের জন্য, নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচনা হয়েছিল, সেই সংবিধানকে তারাই প্রথমে ছিন্ন-ভিন্ন করতে থাকে। তাদের প্রয়োজনে সংশোধন করে তাদের মতো করে নেয়, বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভাইরা অনেক কথা বলেন, দেখবেন ওই বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। বাকশাল গঠনের সময়ের কথাও তারা এড়িয়ে যান। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে ১৯৭৪ সালে এ দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে এ দেশের লাখো মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গেছে। সেই আওয়ামী লীগ যখন বড় গলায় কথা বলে, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, সেদিনের কথা বলেন না কেন? একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেদিন গণতন্ত্র কোথায় ছিল? কেন আপনারা জাতিবিনাশী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? কারণ আপনারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন। সেটা তারা পারেননি, পরাজিত হয়েছেন। বাকশালের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে টেনে তুলেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন, বাক স্বাধীনতা মুক্ত করে দিয়েছিলেন, নতুন করে জেগে ওঠার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।

এ সময় ফখরুল জিয়াউর রহমানের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা তাকে বেশি দিন টিকতে দেয়নি। তাকে নিহত করেছে। কারা করেছে আমরা জানি। আজকে তারাই আবার নতুন করে বাংলাদেশের সব স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যে পতাকা জিয়াউর রহমান রেখে গিয়েছিলেন, সেই পতাকা তুলে ধরেছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

গত ৫০ বছরের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন। গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। আমাকে কোথাও বলতে দেওয়া হবে না। বিচার বিভাগ এখন আর স্বাধীন নেই। ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব, আইন মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশ আসে সেভাবে কাজ করতে হয় তাদের। সেভাবে জামিন হয় বা হয় না, সাজা হয়-সাজা হয় না। মিটিং করতে অনেক দেন-দরবার করতে হয়। আমরা সরাসরি মাঠে দিয়ে সভা করতে পারি না। আমাদের সে অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

এই দেশে আওয়ামী লীগ কী করেছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মেগা উন্নয়নের মধ্যে হচ্ছে মেগা দুর্নীতি। আমাদের সাধারণ মানুষের পরিবর্তন হয়নি। শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরি পায় না। সব মানুষ চিৎকার করছে জিনিসের দাম কমাও। কমাবে কী করে, যারা চুরি করছে এরা সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট এখন যারা আওয়ামী লীগ করছে। তাদের দুর্নীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে।

Link copied!