পাট পচানো ও মাছ চাষ করার প্রায় ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সাড়ে চার বছরেও কোন পুকুর খনন করা হয়নি। যার ফলে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নেয়া এই প্রকল্পের কোন সুবিধাই পায়নি জনগণ। বরং ২৯ টি গাড়ি ও ঋণ প্রদান করার কার্যক্রম দ্রুতই বাস্তবায়ন হয়েছে। ‘হাজামাজা/পতিত পুকুর পুনর্খননের মাধ্যমে সংগঠিত জনগোষ্ঠীর পাট পচানোর পরবর্তী মাছ চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন’ প্রকল্পে এ ধরনের অসঙ্গতি দেখা গেছে।
ঋণ নিয়ে অন্য কাজে ব্যয়
উপকারভোগীরা ঋণ গ্রহণ করে জমি ক্রয়, রিকশা, ভ্যান, দোকান ক্রয়সহ নানা ধরনের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছে বলে জানায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমইডি) বিভাগ। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে অনুমোদিত ‘হাজামাজা/পতিত পুকুর পুনর্খননের মাধ্যমে সংগঠিত জনগোষ্ঠীর পাট পচানোর পরবর্তী মাছ চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন’ প্রকল্পটি জুন ২০২১ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু এই ৪ বছরে কোনো অগ্রগতি নেই। পাটের আঁশ ও পানির গুণগত মান ঠিক রাখার লক্ষ্যে শ্রম ও ব্যয়সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও পাট পচানোর পরবর্তী জলাশয়/পুকুরে মাছ চাষের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উদ্যোগে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) মোট ৩৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প অনুসারে হয়নি সমিতি
প্রকল্পের ডিপিপিতে প্রতিটি পুকুরকেন্দ্রিক সমিতি গঠন করার কথা। কিন্তু প্রকল্পের নির্দেশনা অনুসারে ২৮টি উপজেলায় ২৮০টি পুকুরকেন্দ্রিক সমিতি করার কথা থাকলেও কোনো কমিটি হয়নি। এদিকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে ৭৩টি পুকুর পুনর্খননের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কোনো পুকুর খনন করা হয়নি। পুনর্খনন ব্যতীত নতুন করে পুকুর খনন করার কথা রয়েছে। ৯৮টি পতিত পুকুর খনন বাবদ প্রকল্প থেকে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হলেও এ পর্যন্ত ঋণগ্রহীতারা পুকুর খনন করেনি। এ ছাড়া পুকুর পানি সরবরাহের জন্য শ্যালো মেশিন স্থাপন করার কথা হলেও তা স্থাপিত হয়নি। যেহেতু কোনো ধরনের পুকুর নেই বিধায় এমন শ্যালো মেশিনের প্রয়োজনই নেই।
করোনার কারনে কাজ পিছিয়েছে
পল্লী ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. রেজাউল আহসান বলেন, প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি ৫০ ভাগ হয়ে গিয়েছে। করোনাকালীন অন্য প্রকল্পের মতোই এটিতেই ধীরগতি হয়েছে। তবে আশা করি, নির্দিষ্ট সময়েই সফলভাবেই প্রকল্পটি শেষ হবে।
প্রকল্প অনুসারে কাজ করতে আগ্রহী নয় চাষীরা
পাট পচানোর জন্য রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। কিন্তু রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে অধিক খরচ ও শ্রমিকনির্ভর বিধায় চাষিদের মধ্যে এটা জনপ্রিয় হয়নি। প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব হওয়া সত্ত্বেও উপকারভোগী পাটচাষিরা এখনো সনাতন পদ্ধতিতেই কাজ করছেন।
আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন হয়
মূল কাজ পুকুর পুনঃখনন, এর কোনো খবর নেই। আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে ব্যস্ত কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে গাড়ি ও মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে ২৯টি। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল সেটি পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাস্তবায়নের লক্ষ্য থেকে এখনও ৩৬ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে প্রকল্পটি। মূল কাজ বাস্তবায়ন না করে আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করাকে অনিয়ম হিসেবে দেখছে আইএমইডি।
প্রকল্পের অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো, পতিত পুকুর পুনর্খনন করে পাট পচানো পরে মাছ চাষ করা। কিন্তু কোনো পুকুরেই পাট পচানো ও মাছ চাষের কর্মকাণ্ডই চলছে না। এর মধ্যে বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতা জমি ক্রয়, রিকশা, ভ্যান, দোকান ক্রয়সহ নানা ধরনের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছেন।