ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে ভয়াবহে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। লঞ্চটির মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে এই এলিট ফোর্স।
সোমবার সকালে হামজালাল শেখকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তারের পর রাতে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ গত নভেম্বর মাসে কোনো অনুমোদন ছাড়াই অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। যাত্রীদের জন্য লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ছিল না। মালিক লঞ্চে আগুন লাগার খবর পেয়েও কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবার কোথাও জানাননি। শুধু তাই নয়, আগুন লাগার পর লঞ্চের ক্রুরাও পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা তৈরি করতে লঞ্চটিতে গত নভেম্বরে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। গ্রেপ্তার মালিকের তথ্য অনুযায়ী, ঘাট থেকে বিলম্বে লঞ্চ ছাড়লেও গন্তব্যে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। এ জন্য লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ৭২০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়নি।
একজন সাধারণ মিস্ত্রি বা ফিটার দ্বারা ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয় উল্লেখ করে র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, “আগের ইঞ্জিনটি চায়না থেকে তৈরি ছিল। বর্তমানে জাপানি তৈরি রিকন্ডিশন ইঞ্জিন লাগানো হয়। জাহাজের ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে এবং ইঞ্জিন পরিবর্তন পরবর্তী যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে কারিগরি অনুমমোদন নেননি। এ ছাড়া রান ট্রায়ালও করেননি।”
কমান্ডার মঈন আরও জানান, “লঞ্চে কর্মরত তিনজনের (মাস্টার ও ড্রাইভার) সরকারি কোনো চালনার অনুমোদন ছিল না।ফোনে আগুনের সংবাদ পেলেও চুপচাপ থাকেন।”
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “লঞ্চটিতে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার মোবাইল ফোনে মালিক হামজালালকে বিষয়টি জানান। কিন্তু তিনি কোনো সংস্থা বা জরুরি সেবা কোথাও জানাননি, বরং চুপচাপ থাকেন। আগুন লাগার পর লঞ্চের ক্রুরা (২৬ জন) জ্বলন্ত ও চলন্ত লঞ্চ রেখে পালিয়ে যান। এতেই ঘটনাটি আরও মর্মান্তিক হয়।”
যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না জানিয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, “লঞ্চে শুধু কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে গ্রেপ্তার মালিক জানিয়েছেন। তবে অধিকাংশ বয়াই যথাস্থানে ছিল না।”
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুন লাগে। এতে এ পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ।ওই লঞ্চ দুর্ঘটনায় এখনো শতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনদের দাবি।
আগুনে দগ্ধ ৮১ জনের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৬ জন। ২২ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আর ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।