জুন ২১, ২০২৩, ০৮:১৭ এএম
ব্যাংক থেকে মেয়াদী ঋণ নিয়ে যারা কিস্তি সময়মতো দিতে পারেন নি তাদের জন্য ছাড় দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি জুন মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে বকেয়া কিস্তি বা কিস্তিসমূহের অর্ধেক দিলেও মেয়াদী ঋন গ্রহীতারা খেলাপী হওয়া থেকে রেহাই পাবেন।
অর্থাৎ বকেয়া কিস্তির অর্ধেক পরিশোধ করলে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ঋণ শ্রেণীকরণ করবে না।
এ ব্যাপারে এক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার (২০ জুন) তফসিলী ব্যাংকগুলোকে তাদের স্ব স্ব গ্রাহককে ঋণ শ্রেণীকরনের নতুন নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত করতে বলেছে।
এর ফলে যেসব গ্রাহক ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন তারা অর্ধেক টাকা জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে থাকতে পারবেন।
এ সুবিধার আওতায় পড়বে স্বল্পমেয়াদী কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণসহ সকল মেয়াদী ঋণ গ্রহীতা। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে বিতরনকৃত মোট ১৫ লাখ টাকার মতো ঋণ রয়েছে। এর অর্ধেকই মেয়াদী ঋণ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
ইতোপূর্বে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে কোনো ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপি হবার দায় থেকে মুকৃতি পেয়েছিলেন গ্রাহকেরা।
চলতি বছরে এপ্রিল-জুন সময়ের জন্য আবারও একই ধরনের সুবিধা দেওয়া হলো।
সার্কুলারে এই সুবিধা দেয়ার পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, `সাম্প্রতিক সময়ে বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণগ্রহীতারা তাদের গৃহীত ঋণের বিপরীতে প্রদেয় কিস্তির সম্পূর্ণ অংশ পরিশোধে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন, সেবা খাতসহ সব ব্যবসা চলমান রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।`
সার্কুলারে বলা হয়, গত ১ এপ্রিল থেকে বিদ্যমান নিয়মিত মেয়াদি প্রকৃতির ঋণের (স্বল্পমেয়াদি কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণসহ) বিপরীতে এপ্রিল-জুন সময়ের জন্য যে কিস্তি দিতে হবে তার ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলেই গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না। নতুন এই নির্দেশনা অনুযায়ী সুবিধা নিতে আবেদন করা গ্রাহকদের কিস্তির বাকি অংশ বিদ্যমান ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে এক বা একাধিক কিস্তিতে আদায় করতে হবে। যেসব গ্রাহক এই সুবিধা নেবেন, তাদের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের ওপর ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনোরূপ দণ্ডসুদ বা অতিরিক্ত ফি (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) আরোপ করা যাবে না।
আগে পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে খেলাপিমুক্ত হয়েছেন, এমন গ্রাহকেরাও ঋণ পরিশোধের এই সুবিধা পাবেন। ইসলামি শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একই নীতিমালা অনুসরণ করে সুবিধা দিতে পারবে। পাশাপাশি এই নীতিমালার আওতায় সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ/বিনিয়োগের বিপরীতে যে পরিমাণ আরোপিত সুদ/মুনাফা নগদে আদায় হবে, তা আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে।
তবে এই নির্দেশনা অনুযায়ী কেউ ঋণের কিস্তির অংশ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তা যথানিয়মে খেলাপি করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ফলে গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।