ই-কমার্স বাণিজ্য পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি এর প্রসার ঘটিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রেখে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডিজিটাল ব্যবসায় শৃঙ্খলা আনার পাশাপাশি ভোক্তার আস্থা বৃদ্ধি ও অধিকার নিশ্চিতের কথাও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। রবিবার (৪ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের সই করা এই নির্দেশিকা জারি করা হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাই এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
শহরে ৫ দিনে ডেলিভারি
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহক যদি প্রতিষ্ঠানটির অবস্থানের শহরে থাকে তাহলে ৫ দিন ও অন্য কোনো শহরে থাকলে বা তিনি গ্রামের হলে সময় নেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ দিন। তবে বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ওই পণ্য ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পাশাপাশি ক্রেতাকে টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে।
পণ্য সঠিক সময়ে দিতে না পারলে যে মাধ্যমে টাকা নিয়েছিল সেই মাধ্যমেই টাকা ফেরত দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মাধ্যম ব্যবহার বাধ্যতামূলক
সব ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিরেকে তৈরি, ব্যবহার বা ক্রয় বিক্রয় করা যাবে না।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য বা সেবা কেনার জন্য বাধ্য করা যাবে না। সকল ডিজিটাল কমার্স পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন, টিআইএন, ইউনিক বিসনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা পারসোনাল রিটেইল এর অন্তত একটি গ্রহণ করতে হবে এবং তার মার্কেটপ্লেস বা সোশাল মিডিয়া পেজে তা প্রদর্শন করতে হবে। স্বচ্ছতার জন্য ব্যবসায় লেনদেন সংক্রান্ত সকল তথ্য অন্তত ৬ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে এবং সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত যেকোনো সংস্থা চাহিবামাত্র তা সরবরাহ করতে হবে।
সময়সীমা উল্লেখ করতে হবে
সরকারের জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০২০ এর বিধানমতে এ নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে নির্দেশিকায় বলা হয়, ডিজিটাল কেনাবেচার ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় কমার্স নীতিমালা (সংশোধিত) ২০২০ এর সফল বাস্তবায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য।
আরও বলা হয়, দেশের সংশ্লিষ্ট সকল প্রচলিত আইন ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ওয়েবসাইট, মার্কেট প্লেস বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য ও সেবা কেনাবেচার জন্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা সংশ্লিষ্ট বিবরণ ও শর্তাবলি-যেমন পণ্য ও মূল্য ফেরতের শর্তাবলি, পরিবর্তন, সরবরাহের সময়সীমা ইত্যাদি বিষয়ে সকল শর্তাবলি সুস্পস্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
এমএলএম নিষিদ্ধ
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্সের মাধ্যমে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যমে নেশা সামগ্রী, বিস্ফোরক দ্রব্য বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ সামগ্রী বা সেবা কেনাবেচা যাবে না। জুয়া বা অনলাইন ব্যাটিং বা অনলাইন গ্যাম্বলিং করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যমে ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী কেনাবেচার ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। একইভাবে কোনো দাহ্য পদার্থ কেনাবেচার ক্ষেত্রেও বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স নিতে হবে।