জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই দেশের মানুষ অপেক্ষায় থাকে কবে রাজশাহীর আম বাজারে উঠবে, কেমন হবে দাম? যদিও আম প্রেমীদের জন্য এবার সুখবর দিচ্ছে না রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এবার মুকুল এসেছিল অনেক দেরিতে।
তীব্র তাপপ্রবাহে আমের মুকুল বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে জন্য গাছে আমের সংখ্যা কম। গত ১৫ মে থেকে বাজারে আনা হয় গুঁটি আম। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
আগামীকাল বাজারে উঠবে আমের জনপ্রিয় জাত গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ও রানীপছন্দ।
রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার আম ব্যাবসায়ী রাজিব বিশ্বাস বলেন, “এ বছর আমের ফলন কম হওয়ায় আমের দাম বেশ চড়া। গত বছর আমরা গোপালভোগ ৮০০-১২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। এ বছর গোপালভোগ ২২০০-২৮০০ টাকা মণ চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “এ বছর তার বাগানে গড়ে ১০০ গাছের মধ্যে প্রায় ৭০টি গাছেই আম নেই বললেই চলে।”
গত ১২ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। ঘোষিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে শুরু হয়েছে গুঁটি-জাতীয় আম নামানো ও আগামীকাল থেকে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, লখনা ও রানীপছন্দ নামানো শুরু হবে। ৩০ মে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি থেকে গাছ থেকে নামানো যাবে ও একই তারিখে লক্ষ্মণভোগ বা লখনা বাজারে উঠবে। এছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
নির্ধারিত সময় পরিপক্ক আম কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বাজারজাত করার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। এগুলোতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর এ অঞ্চলে আম উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন। এবার উৎপাদনে ভাটা পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসাবে চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা যচ্ছে। আম উৎপাদনকারী আরেক জেলা নওগাঁয় এবার বাগান রয়েছে ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এখানে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমির আম বাগান থেকে এবার ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।
রাজশাহীর বেশির ভাগ আম হয় বাঘা ও চারঘাটে। বাঘার আম চাষী শফিকুল ইসলাম সানা বলেন, “এ বছর প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছেন তিনি। গত বছর প্রায় এক কোটি টাকা আম বিক্রি করেছিলেন। এর মধ্যে ২৬ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানিও করেছিলেন। তবে এবার গাছে গুঁটি কম থাকায় হতাশ হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “গত বছর তার বাগানে পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। সেই হিসেবে এ বছর খুব কম আম হয়েছে।”
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, “চলতি মৌসুমে রাজশাহীর আম বাজারজাতকরণ ১৫ থেকে শুরু হয়েছে। আগামীকাল শনিবার গোপালভোগ নামানো শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে। আশা করবো, ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরিপক্ক আম কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বাজারজাত করবেন।”