পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনায় অগ্রগতি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৮, ২০২৫, ০১:৪০ পিএম

পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত করতে ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনায় অগ্রগতি

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে চলমান আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

উভয় পক্ষই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই চুক্তি সম্পন্ন করতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সর্বশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এই আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ।

ড. খলিলুর রহমান, যিনি জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের সাবেক বাণিজ্যনীতি প্রধান, জানান, “আমাদের আলোচনায় খুব ভালো অগ্রগতি হয়েছে। উভয় দেশই আন্তরিকভাবে চুক্তিটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে কাজ করছে।

এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ কিছু দেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।

যদিও সেটি পরবর্তী সময়ে তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়, সেই মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আগামী ৯ জুলাই। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়ার জবাবে বাংলাদেশ সরকার একটি পাল্টা প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ অনুরোধ করেছে, পারস্পরিক শুল্কহার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে, যা বর্তমানে বলবৎ রয়েছে।

অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে তাদের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য আইন মানতে হবেযা ঢাকার মতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

শুল্ক স্থগিতাদেশের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের সরকার বাণিজ্য সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা। সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য সরকারি-বেসরকারি (জি-টু-জি) চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এছাড়া বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বোয়িং কোম্পানি থেকে বিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে এবং আমেরিকা থেকে তুলা আমদানি প্রক্রিয়াও সহজ করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাল্টা শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারতের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে আছে।

গত ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি গোপনীয়তা চুক্তি (নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরিত হয়, যার ভিত্তিতে আলোচনার শর্তাবলি প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

এরপর ১৭ জুন একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক শুল্ক চুক্তির আলোচনায় অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি আগামী ২৯ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে চুক্তির কাঠামো ও সময়সূচি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তিটি বাংলাদেশের রপ্তানি খাতবিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্যঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

Link copied!