সরবরাহ চেইন পুনরুদ্ধারের পরেও চালের বাজার চড়া

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

আগস্ট ১১, ২০২৪, ০৬:১৪ এএম

সরবরাহ চেইন পুনরুদ্ধারের পরেও চালের বাজার চড়া

চাল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও সরবরাহ চেইন পুনরুদ্ধারের পর বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করলেও চালের দাম এখনও কমেনি। বাজারে পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও দেড় মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি চালের দাম অন্তত ৫-৮ টাকা। পাইকারি ও খুচরা উভয় ব্যবসায়ীরাই বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে মিল পর্যায়ে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “আশা করা হচ্ছে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কিছুটা বাধা তৈরি করলেও সংকট কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”

তিনি আরও বলেন, “কয়েকটি সমস্যা হয়েছে। একটি হলো পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না, যার ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এছাড়া অনেক রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন সাম্প্রতিক ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এর ফলে অনেক নেতা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।”

চালের দাম বাড়ার আরেকটি কারণ উল্লেখ করে ইসমাইল হোসেন বলেন, “খোলাবাজার বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম গত সপ্তাহে বন্ধ ছিল। তবে রোববার থেকে ওএমএস কার্যক্রম পুরোদমে আবার শুরু হচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। আমি আশাবাদী, খুব শীঘ্রই চালের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।”

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রি-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৮ টাকায়। এছাড়া ব্রি-২৯ চাল ৬০ টাকা, জিরাশাইল বা মিনিকেট ৬৬-৭০ টাকা, পাইজাম ৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭২-৭৬ টাকা, সিদ্ধ কাটারি ৭৫-৭৬ টাকা এবং বাসমতি ৮৮-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারগুলোতে এসব চাল পাইকারির চেয়ে কেজিতে অন্তত ৩-৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদের পর পর অর্থাৎ জুনের তৃতীয় সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে চালের দাম অন্তত ৫-৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। জুলাইয়ে ১ দফা দাম কমলেও পরে আবার বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা।

খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে চালের দামে প্রভাব রাখে মিল পর্যায়ে চালের মূল্য। দেশের সবচেয়ে বড় চালের আড়ত নওগাঁয়। জেলাটির মিলগুলো থেকেই সারা দেশে চালের সরবরাহ সবচেয়ে বেশি হয়।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী শাহন হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, “শুক্রবার আমরা চাল এনেছি প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা বেশি দাম দিয়ে। এক মাস ধরেই চালের দাম বাড়ছে। মিলগেটে চালের দাম বাড়লে আমাদের তো কমানোর সুযোগ নেই। তবে এখন চালের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।”

গতকাল শনিবার দেশের সর্ববৃহৎ চালের আড়ৎ নওগাঁর আড়তদারপট্টিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিলগেটে স্বর্ণা ৫২-৫৩ টাকা, ব্রি-২৮ চাল ৫৭-৫৮ টাকা, সুভলতা ৬০-৬১ টাকা, জিরাশাইল বা মিনিকেট ৬৫-৬৬ টাকা ও কাটারীভোগ সিদ্ধ ৫৬-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জুনের তৃতীয় সপ্তাহে স্বর্ণা ৪৯-৫০ টাকা, ব্রি-২৮ চাল ৫৪-৫৫ টাকা, সুভলতা ৫১-৫২ টাকা, জিরাশাইল ৫৯-৬০ টাকা ও কাটারীভোগ ৫৯-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

নওগাঁর সুকুমার রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী সুকুমার ব্রহ্ম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, “নিরাপত্তার অভাবে চালের সরবরাহ কম। আমরা বিভিন্ন স্থানে চাল পাঠাতে পারছি না। তবে যারা অর্ডার দিচ্ছে, তাদেরকে পাঠাচ্ছি। কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না, রাস্তায় যদি কোনও দুর্ঘটনা হয়। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।”

ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে চালের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, “চালের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ধানের মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলছে। অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে এবার ধানের দাম বেশি ছিল। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও চালের বাজারে প্রভাব রাখছে।”

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, “এখন চাঁদাবাজি নেই। দাম বরং কমার কথা। কিন্তু মিলগুলো সবসময় রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করায় ব্যস্ত। গত এক-দেড় মাস যেহেতু অস্থিরতা ছিল, তারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। এটা অপ্রত্যাশিত। নতুন সরকারের উচিত কঠোরভাবে মনিটরিং করা।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরদিন শুক্রবার ব্যবসায়ীরা জানান, তিনদিনে সবজির দাম কেজিতে অন্তত ১৫ টাকা কমেছে, একই সময় মুরগির দাম কমেছে ২০ টাকা।

Link copied!