রিং আইডির এপিঠ ওপিঠ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৯, ২০২১, ০৭:০৩ পিএম

রিং আইডির এপিঠ ওপিঠ

কম সময়ে এবং সহজে আয়ের জায়গা রিং আইডি! বন্ধুদের মুখে এমন কথা শুনেই চোখে-মুখে স্বপ্নের জাল বুনেছিলেন বেকার কাজল। ধারদেনা করে রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে হয়ে গেলেন সচ্ছল! এদিকে ২০১৯ সালে আঁখি বেগমসহ তার দুই ভাই ও এক ভাগ্নে মোট ৮৬ হাজার টাকা কয়েক ধাপে রিং আইডিতে বিনিয়োগ করেন। এরমধ্যে আঁখির এক ভাই সামান্য কিছু টাকা উত্তোলন করতে পেরেছেন। কিন্তু তিনিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা লাভ দূরের কথা বিনিয়োগ করা মূলধনও ফেরত পাওয়া নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন।

৬ বছর ধরে চলছিল রিং আইডি

সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলাম। তার গ্রেফতারের পর ২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করা 'রিং আইডি' নিয়ে এমনি নানান রকম গল্প, নানান কাহিনী বের হয়ে আসছে। কেউ লাভবান তো কেউ প্রতারিত। সিআইডি বলছে, অর্থ আয়ের লোভনীয় অফার দিয়ে তরুণ, ছাত্র ও গৃহিণী, বিশেষ করে বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে সহজেই আকৃষ্ট করছে কথিত সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মটি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এতো অভিযোগের পরেও পরিচালক সাইফুল ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি ও রিং আইডির জব্দ করা ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে করেছে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা।

রিং আইডি খুলে দেয়ার আহ্বান

গত সোমবার (১৮ অক্টোবর) রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়াসহ রিং আইডির সব অভিযোগ তুলে নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ব্যবহারকারীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রিং আইডি ইউজারগণের ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা। মানববন্ধনে মো. সোহাগ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, রিং আইডি লাখো বেকারের কর্মসংস্থান। এখানে যারা বিনিয়োগ করেছে তারা সবাই বেকার কিংবা শিক্ষার্থী। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ছাত্ররা রাস্তায় বসে যাবে। অনেকে আত্মহত্যা করতে পারে। আমাদের দাবি- রিং আইডি দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া হোক। মো. রাজু আহমেদ বলেন, রিং আইডি খুলেছি, আমাদের আইডি আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমাদের যে আয়ের সোর্স ছিল তা দিয়ে আমরা চলতে পারতাম। এখন আমাদের চলার কোনো রাস্তা নেই। এসময় তারা রিং আইডির পরিচালকের মুক্তি ও বিনিয়োগকারীদের জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধনে সারাদেশ থেকে কয়েকশ রিং আইডি ব্যবহারকারী অংশ নেন। এ মানববন্ধনে অংশ নেয়া অনেকেই বলেন, অন্য ই-কমার্সের মতো রিং আইডি পণ্য দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করেনি, বরং তারা গ্রাহকদের স্বাবলম্বী করেছে। তাই অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালককে মুক্তি দিয়ে রিং আইডি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার সুযোগ দেয়ার দাবি করেন গ্রাহকরা।

কানাডা থেকে চলছিল রিং আইডি

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইরিন ইসলাম ও শরিফ ইসলামের যৌথ উদ্যোগে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরুর দুই বছরেই গুগল প্লেস্টোরের সর্বোচ্চ ডাউনলোডের শীর্ষ দশের তালিকার প্রথমদিকে স্থান করে নেয় রিং আইডি। বিভিন্ন পরিষেবার মাধ্যমে রিং আইডি ব্যবহারকারীদের আয়ের সুযোগ তৈরি করে করছে। এর মধ্যে রিং আইডি এজেন্ট, রিং আইডি অ্যাম্বাসেডর এবং রিং আইডি ব্রান্ড প্রোমোটার উল্লেখযোগ্য। এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

এমএলএম পদ্ধতিতে চলছিল রিং আইডি

অনেকটা এমএলএম পদ্ধতি অনুসরণ করে চলছিল রিং আইডি। এতে প্রথমে এজেন্ট হওয়ার মাধ্যমে শুরু করা যেত। এজেন্ট হচ্ছেন রিং আইডির স্থানীয় প্রতিনিধি। তিনি যেকোনও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী অর্ডারকৃত পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেন এবং রিং আইডি প্রদত্ত সব সেবা প্রদান করেন। যে কোন রিং আইডি ব্যবহারকারী বিনামূল্যে রিং আইডি অ্যাম্বাসেডর হতে পারেন। তিনি রিং আইডি ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। যেকোন ব্যবহারকারী রিং আইডি স্টোর থেকে তার পছন্দ অনুযায়ী পণ্য দিয়ে তার ভার্চুয়াল স্টোর তৈরি করতে পারেন এবং ভিডিও লাইভে তা প্রোমোট করতে পারেন। কোন ব্যবহারকারী যদি তার স্টোর থেকে পণ্য ক্রয় করে, তবে স্টোর ওনার বিক্রিত পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট সেলস কমিশন পান।

টাকার বিনিময়ে প্রোমোটর নিয়োগ

রিংআইডি ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে রিং আইডি ব্রান্ড প্রোমোটার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়। এটি একটি সামাজিক শ্রম বিক্রি প্রক্রিয়া। যেখানে ব্র্যান্ড প্রোমোটারকে রিং আইডি কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব সম্পাদন করতে হয়। প্রতিটি কাজের সফল সমাপ্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেওয়া হয়। দুই কোটির বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে রিং আইডি হয়ে উঠে এশিয়ার অন্যতম ডিজিটাল আকর্ষণ। যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে দেশ ও দেশের বাইরে। রিং আইডি সক্রিয় ও নিয়মিত ব্যবহারকারী তৈরিতে বদ্ধপরিকর। গত ২ অক্টোবর বেসরকারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। রিং আইডির প্রায় ২শ’ কোটি টাকা সিআইডির অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক জব্দ করেছে। তবে রিং আইডির হাতিয়ে নেওয়া টাকার পরিমাণ আরো অনেক। সেই টাকা কোথায় জমা আছে তা এখনো জানা যায়নি।

Link copied!