পাস হলো করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ৩০, ২০২১, ১১:০৮ পিএম

পাস হলো করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট

নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২১ পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস করা হয়েছে। বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ বিল পাস হয়। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহম্মদ কাদের উপস্থিত ছিলেন। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে সংসদের অনুমোদন পাওয়া অর্থবছরের নতুন এই বাজেট। এটি মহামারি করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট।

কন্ঠভোটে সকল প্রস্তাব গ্রহণ 

বুধবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হলে অধিবেশনের শুরুতে ২০২১-২২ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আনীত ছাটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একে একে অন্য মন্ত্রীরা তাদের স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে সে সকল প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২১ জাতীয় সংসদে পাস করার জন্য উত্থাপণ করা হলে তা কন্ঠভোটে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। এ সময় সংসদে উপস্থিত সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংসদে সরকারি বিরোধীদলীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

৩ জুন বাজেট প্রস্তাবনা দেওয়া হয়

উল্লেখ্য, গত ০৩ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এবারের বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সূদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ।’ অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এ বছরের বাজেটকে মানবিক, মানুষের জন্য ও স্বপ্নপূরণের বাজেট আখ্যা দিয়ে এর আকার নির্ধারণ করেছেন ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৭ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।

ঘাটতি ২ লাখ কোটি টাকার বেশি

নতুন অর্থবছরের জন্য সংসদে পাশ হওয়া বাজেটে ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় বৈদেশিক অর্থায়ন থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা যোগাড় করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বাজেট ঘাটতির এই হার জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সকল প্রকার বিলাসী বিশেষ করে আমদানি করা বিদেশি পণ্যের উপর ট্যাক্স ধার্য করেছেন। বাড়ির নকশা অনুমোদন করতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করেছেন। ফলে শহরে বা গ্রামে যেকোনো জায়গায় বাড়ি করতে হলে টিআইএন নিতে হবে। এতে বাড়ির মালিক করের আওতায় আসবেন। এ ছাড়া যে কোনও সমবায় সমিতির নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি বাড়ছে

করোনার নেতিবাচক প্রভাবে সাধারন অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, এ কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয়ের পরিধি বাড়িয়ে বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছে সরকার। ৮ লাখ বাড়ানো হয়েছে বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

প্রত্যাশিত করোনা মহামারিকে নির্মুল করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাখাতে ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর বাইরে করোনা মোকাবিলায় এবারও থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্যখাতের অর্জনসমূহকে টেকসই করা ও ভবিষ্যতে মহামারির অভিঘাত হতে পরিত্রাণ পেতে মানসম্পন্ন গবেষণাভিত্তিক স্বাস্থ্যশিক্ষার সম্প্রসারণে আগামী অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

Link copied!