ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৫:৫৩ পিএম
দেশে বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। এরমধ্যেই সরকার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। ফলে এখন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একই সাথে দুটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি তা পারবে কিনা এই নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা।
ভর্তি কার্যক্রম বাকি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে রয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে এক শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও, এবারও স্থবির শিক্ষা কার্যক্রমের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এমনকি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, গুচ্ছ ভর্তিতে অংশগ্রহণ করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারেনি।
উল্লেখ্য যে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে নয়টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিকের মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেন। এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিকে মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন।
দ্রুতই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন এর পরিচালক অধ্যাপক ড. জামিনুর রহমান বলেন, এটা আসলে খুব বড় ধরণের সমস্যা নয়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব দ্রুতই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে। অন্যদিকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল মাত্র প্রকাশ করা হয়েছে। কাজেই, দুই শিক্ষাবর্ষের ভর্তি নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।
তবে অন্যান্য সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে শেষ হয়ে গেলেও, এবার কেন এই দেরী হয়েছে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে জামিনুর রহমান এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা জানান। অল্প কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পর্যন্ত তাদের ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট ইতোমধ্যেই তাদের ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রক্রিয়া ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আগেও হয়েছিল এমন সমস্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ১৯৮৬ বা ৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো যেখানে একই সাথে দুই সেশনের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখনও এ উদ্যোগ নেয়া সম্ভব। তবে এর সাথে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়েরই অনেকগুলো ইনফ্রাস্ট্রাকচার খালি থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীদের সেখানে ক্লাস নেয়া সম্ভব। তবে শিক্ষার্থীদের আবাসন, যাতায়াত, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এ ক্ষেত্রে। এ ছাড়াও, অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব।
“তবে আমার ক্লাস নেয়ার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের এলাকাসমূহে অনেকক্ষেত্রেই ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, ডিভাইস থাকে না অনেকের কাছে। একই সাথে দুই সেশনের ক্লাস চালু করলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরেও অতিরিক্ত চাপ পড়বে। তাদের এ সকল বিষয়ে নজর দেয়া জরুরী। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা জরুরী। আমাদের গার্মেন্টস খাতের কর্তৃপক্ষ যেকোন দাবি তুললেই হাজার হাজার কোটি টাকা ইনসেন্টিভ পায়, শিক্ষার্থীদের দিকে সে তুলনায় মনোযোগটা বেশি দেয়া জরুরী,” বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথমবারের মত দেশের ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে তিন লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ১,২০০ টাকা করে প্রদান করার মাধ্যমে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।