জিম্মিদের মুক্তিতে সম্মতি জানাল হামাস, তবে গাজায় বিদেশি শাসন প্রত্যাখ্যান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ৪, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম

জিম্মিদের মুক্তিতে সম্মতি জানাল হামাস, তবে গাজায় বিদেশি শাসন প্রত্যাখ্যান

গাজা সিটিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন, হামাস সেনারা।

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আটক সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হামাস, শুক্রবার জানিয়েছে ফিলিস্তিনি এই প্রতিরোধ সংগঠন।

হামাস জানিয়েছে, সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব, বিভিন্ন ফিলিস্তিনি অংশ ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ‘বিস্তারিত পরামর্শ শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঘোষণার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার হুঁশিয়ারি দেন, হামাসকে তার প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা রবিবার সন্ধ্যা ৬টা (যুক্তরাষ্ট্র সময়) এর মধ্যে মানতে হবে, অন্যথায় “নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। তাঁর হুঁশিয়ারিতে সব জিম্মিসজীব ও মৃতমুক্ত করার শর্তও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কিছু ঘণ্টার মধ্যে হামাস জানায়, তারা মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার আংশিক সম্মতি দিয়েছে, বিশেষ করে জিম্মি বিনিময় সংক্রান্ত ধারা গ্রহণ করেছে। তবে হামাস বলেছে, এই প্রক্রিয়া মাঠপর্যায়ের শর্ত মেনে করতে হবে।

হামাস আরও জানায়, বিস্তারিত আলোচনার জন্য তারা অবিলম্বে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে টেবিলে ফেরার জন্য প্রস্তুত। এছাড়া তারা গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি প্রযুক্তিবিদ সংস্থার হাতে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে, যা জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামি বিশ্বের সমর্থনের ভিত্তিতে গঠিত হবে।

হামাসের ঘোষণার পর, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাগত জানান এবং তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে বলেন, ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে যাতে জিম্মিদের নিরাপদে মুক্তি দেওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেন, চলমান হামলা জিম্মিদের জীবনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

এরপরই ইসরায়েল সরকার তাদের সেনাবাহিনীকে গাজা অভিযানের স্থগিতাদেশ দেয়, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি রেডিও দ্বারা প্রচারিত হয়।

ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প আরও বলেন, “আমরা এখনো অসম্পূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। এটি শুধু গাজা নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।

ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এর ওয়াশিংটন সংবাদদাতা বারাক রাভিদ এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানান, ট্রাম্পের দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অবাক করেছে।

হামাস স্পষ্ট করেছে, তারা ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা পুরোপুরি মেনে নেয়নি, কেবল কিছু অংশের সঙ্গে আংশিক সম্মতি দিয়েছে। তারা পুনরায় উল্লেখ করেছে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় এখনও সমাধান হয়নি, বিশেষ করে গাজার সামরিকীকরণ মুক্তকরণ।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক আল-জাজিরা আল-জাজিরাকে বলেন, “ইসরায়েলের দখল পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অস্ত্র ত্যাগ করব না।

হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার ভবিষ্যত এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অন্তর্নিহিত অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির ভিত্তিতে একটি বিস্তৃত জাতীয় কাঠামোর মধ্যে আলোচনার বিষয়।

বিবৃতির পর হামাসের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ওসামা হামদান দোহা থেকে আল-আরবি টিভিকে জানিয়েছেন, গাজায় কোনও বিদেশি প্রশাসন তারা গ্রহণ করবে না। “গাজার শাসন ফিলিস্তিনিদের হাতে থাকা উচিত, অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য হলেও,” তিনি বলেন।

ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার একটি বিতর্কিত প্রস্তাব হলো, গাজা পরিচালনার দায়িত্ব সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বাধীন ধনী ও প্রভাবশালী ইহুদিবাদী ব্যক্তিদের একটি কমিটির হাতে তুলে দেওয়া।

এক নজিরবিহীন পদক্ষেপে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে হামাসের পূর্ণ বিবৃতি সংযুক্ত করেছেন। আগে কখনও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনভাবে হামাসের অফিসিয়াল নথি সরাসরি জনগণের সামনে উপস্থাপন করেননি।

Link copied!