গত বছরের ৫ জুলাই ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে দশমিক ৭৫ গ্রাম (১৩৮টি রঙিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ) এলএসডিসহ (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) নাজমুল ইসলাম নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও ল্যাপটপের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে ডার্ক ওয়েব (ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ) থেকে মাদক কেনা ও লেনদেনসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। সেই প্রতিবেদনটি আদলতে জমা দেওয়া হয়েছে।
সচরাচর ব্যবহৃত গুগল বা বিং কিংবা ইয়াহু নয় এর থেকে একদম আলাদা ও টপ লেভেল ডোমেইন ব্যবহার না করে অন্য বিশেষ কিছু নাম ব্যবহার করে ক্রমশই ভয়ংকর অপরাধ করছে এক ধরনের অপরাধীরা। প্রযুক্তিক্তির উন্নয়নের ফলে অপরাধীর ধরনও পাল্টাচ্ছে তারা। অপরাধীরাও দেদারছে প্রযুক্তির সহায়তায় গড়ে তুলছে তাদের নিজস্ব অপরাধ জগত। যার নামকরণ করা হয়েছে ডার্ক ওয়েব নামে।
গোপনীয় অনলাইন যোগাযোগের আইডিয়া কে কেন্দ্র করেই ডার্ক ওয়েবের পথ চলা শুরু হয় ১৯৬০ সালে ARPANET(Advanced Research Projects Agency Network) সৃষ্টির মাধ্যমে। এটি হচ্ছে একটি পরীক্ষামূলক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের অবস্থা যার হাত ধরেই শুরু হয় ডার্ক ওয়েভ।
ARPANET যখন সহজ যোগাযোগের বিভিন্ন আবিষ্কার নিয়ে মেতেছিলো যখন কোল্ডে ওয়ার সময়কালীন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এই আবিষ্কারগুলোকে ব্যবহার করার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করে। Advanced Research Projects Agency নামে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি সংস্থা সেন্ট্রাল কোরবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু করতে ডার্ক ওয়েব তৈরি করেছিল প্রাইভেসি রক্ষা করার জন্য। তবে র্বতমান বিশ্বে ডার্ক ওয়েভে কল্যাণেল চেয়ে অকল্যাণই হচ্ছে বেশি।এখন বিভিন্ন অবৈধ লেনদেন ও ব্যবসা ছাড়াও বড় বড় অপরাধমূলক কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন মাদক কেনাবেচা,তথ্য কেনাবেচা সহ অস্ত্র কেনাবেচা ,ভাড়াটে খুনি কেনা বেচা চলছে বলে জানা যায়।
ডার্ক ওয়েব ব্যবহারকারীরা ডটকম, ডট নেট, ডট ওআরজি, ডট বিজ, ডট গভ. ইত্যাদি ব্যবহার করে না। তারা গতানুগতিকডোমেইন রেজিস্ট্রেশন না করে ভিন্নভাবে অন্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে রেজিস্ট্রেশন করে। বিটনেট, অনিয়ন, ফ্রিনেট ইত্যাদি ডোমেইন ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডট ওনিয়ন নেটওয়ার্ক। এটি তৈরি হয়েছিল মূলত মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য। কিন্তু এটি আজ এতই বিস্তৃত যে, এসব সাইট কে বা কারা চালায়, সেটা জানা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের সাইটগুলো হ্যাকারদের জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক।
বাংলাদেশে ডার্ক ওয়েব ব্যবহারকারী বা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে মাদকের সম্পৃক্ত অপরাধী সম্পকে দ্য রিপোট ডট লাইভের প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকার উপ-পরিচালক মানজারুল ইসলাম।
ডার্ক ওয়েবে মাদকের প্রশ্নে তিনি বলেন, অপরাধীরা তাদের অপরাধের ধরন পাল্টে ফেলছে।বাংলাদেশে ডার্ক ওয়েব ইউজার খুবই কম। সম্প্রতি ডার্ক ওয়েব র্পনগ্রাফি ক্রয় করে এরকমই কিছু অপরাধী ধরা পড়লেও সিরিয়াস ক্রাইমের আওতায় মাদকের চালানসহ নাজমুলকে গ্রেফতারের পর তার ল্যাপটপ ও মুঠোফোন ফরেনসিকে পাঠানো হলে তার মুঠোফোনের হোয়াটসআপে কথোপকথন বার্তাতে পাওয়া যায় ডার্ক ওয়েব লেনদেন ও মাদক বেচাকেনার তথ্য। এরপরেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তবে ডার্ক ওয়েবে সক্রিয় অপরাধীদের শনাক্ত করতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে আমাদের। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আধুনিকায়নের একটি প্রকল্প এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।সেটি বাস্তবায়িত হলে তখন এসব অপরাধীকে ধরতে আমরা সক্ষমতা র্অজন করবো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে আরও বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং,বা সফটওয়্যার নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, যারা বিভিন্ন ইন্টারনেট ভিওিক সফটওয়্যারের সাথে কমিউনিকেশন যুক্ত এমন মানুষ জনই এক সময় ডাক ওয়েভে অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
মানজারুল ইসলাম আরও বলেন, ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে অপরাধ আগে থেকেই চলে আসছিল। তবে পর্ণগ্রাফিসহ অন্যান্য অপরাধের সন্ধান পেয়েছিল আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। কিন্তু মাদক লেনদেনের মত ঘটনার ফলে এগুলো সনাক্তে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে প্রসাশনের।