মার্চ ২১, ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সেনাবাহিনী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্রমশ মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছেন।
২০ মার্চ আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে যারা হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, তাদের বিচার হবে।
এরপর মধ্যরাতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার দাবি, সেনানিবাস থেকে আওয়ামী লীগকে নতুন আঙ্গিকে ফিরিয়ে আনার জন্য নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে একটি "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ" গঠনের পরিকল্পনা চলছে।
এদিকে, রাত পোনে দুইটার দিকে হাসনাতের পোস্ট মুহুর্তেই ভাইরাল হয়। ঘটনার পর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। পরবর্তীতে ২১শে মার্চ শুক্রবার জুম্মার পর বিক্ষোভের ডাক দেয় অনেকে।
এদিকে, এদিন সকালে ফেসবুকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করেন,”সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রথম থেকেই ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার বিরোধিতা করেছিলেন। তার মতে, ইউনূস একজন ’দণ্ডিত ব্যক্তি’ হওয়ায় তাকে সরকারের নেতৃত্বে বসানো ঠিক হয়নি। সেনাপ্রধানের এই আপত্তি উপেক্ষা করে ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছিল।”
ভিডিও বার্তায় আসিফ মাহমুদ বলেন, “সেনাপ্রধান আমাদের স্পষ্ট বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ইউনূসকে চায় না, তাই তাকে প্রধান উপদেষ্টা করা ঠিক হবে না। এমনকি তিনি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।”
এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর, আরেক নেতা সারজিস আলমের পোস্ট: “লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। গণহত্যাকারী আওয়ামীলীগের নিষিদ্ধকরণ পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।“
এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে - দ্বিতীয় লড়াইটা তাহলে কার বিরুদ্ধে? বিপ্লবী তরুণদের নিশানায় এবার কে বা কারা?
এদিকে, হাসনাতের ফেসবুক পোস্টের পর সেনাবাহিনী ও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ২০ মার্চ রাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল করা হয়। তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের নিন্দা জানায়।
২১ মার্চ শুক্রবার জুম্মার পরেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
উত্তরায় একটি সমাবেশে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সামনেই স্লোগান দিতে দেখা যায়: ‘ওয়াকার না হাসনাত, হাসনাত হাসনাত’।
এদিকে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে’ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
সেখান থেকে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জামায়াতের আমির এ কথা বলেন।
তবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ”আওয়ামী লীগ পুরোনো দল। অপরাধীদের বিচার হওয়ার পর যদি জনগণ তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়, সেখানে তো আমাদের কিছু বলার নাই। যে লোক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবেন, তিনি যদি কোনো অপরাধ না করেন, ছাত্র হত্যা না করেন, অর্থ লোপাট বা পাচার না করেন- তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না? এটি হচ্ছে আমার বক্তব্য।”
এদিকে, চলমান উত্তেজনা নিরসনে সকাল থেকেই টহল বাড়িয়েছে যৌথবাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা জুড়ে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অস্বাভাবিকভাবে সেনাসদস্যদের টহল ও নজরদারি করতে দেখা গেছে।
স্থাপন করা হয়ছে বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট। বিশেষ করে বাইতুল মোকাররম, প্রেসক্লাব, শাহবাগ ও পল্টন এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
অত্যন্ত অনিশ্চয়তার পথে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সেনাবাহিনী, ইউনূস প্রশাসন এবং ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে যে ত্রিমুখী টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল সময়ই নির্ধারণ করবে কোন দিকে মোড় নেবে।