বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে জামায়াত নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “আমি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি সমর্থন করি না। কিন্তু তাদের যে কৌশল, অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত। ঠিক কমিউনিস্টদের মতোই অনেকটা খেয়াল করে দেখবেন। তাদের স্টাডি সেল আছে। তাদের যে ছাত্রশিবির, তাদের সেল আছে। তাদের লেখাপড়া করতে হয়, বইপত্র পড়তে হয়। জ্ঞানের চর্চা যদি না থাকে, জ্ঞানচর্চা ছাড়া কখনও সফল হতে পারবেন না।”
মির্জা ফখরুলের এই মন্তব্যেরই সমালোচনা করলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার (৩ জুন) আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে এবং বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “জামায়াত নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা সুস্পষ্টভাবে অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক। জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশের মূল চেতনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও স্বাধীনতার মূল্যবোধের পরিপন্থী।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী, উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য আবারও প্রমাণিত করে, তারা যেখানেই যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে বিএনপির গভীর বন্ধন আছে।”
মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “রাজনীতির এই ধারা বারবার দেশবিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। একজন দেশপ্রেমিক কখনোই ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রচিত সংবিধান ও রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনাবিরোধী রাজনীতিকে কোনোভাবেই স্বীকৃতি দিতে পারে না। যাদের রাজনীতি দেশের ভিত্তিমূলে আঘাত হানে, তাদের কৌশলও কখনও বিজ্ঞানসম্মত বা যৌক্তিক হতে পারে না।”
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, “মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে প্রগতিশীলতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা তার প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। একই সঙ্গে তার বক্তব্যে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার দুরভিসন্ধিও প্রকাশ হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত।”
এ সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তির রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শবিরোধী কোনো রাজনৈতিক অপশক্তিকে আওয়ামী লীগ কখনো স্বীকৃতি দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, “ঐতিহাসিকভাবেই বিএনপির সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তির গভীর আঁতাত ও সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা তাদের প্রতি একধরনের দায়বদ্ধতা অনুভব করেন ও সর্বদা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন।”
স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির রাজনীতির সামাজিক বৈধতা ও স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠায় বিএনপি বরাবরই চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বিএনপির রাজনীতি এই চক্রেই আবর্তিত। তারা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।