কালজয়ী সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৪, ২০২১, ০৪:২১ পিএম

কালজয়ী সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন

সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন ১৯৭৮ সালের ৪ মার্চ ঢাকায় মারা যান। তিনি অবিভক্ত বাংলার সাংবাদিকতার অন্যতম অগ্রপথিক এবং দৈনিক আজাদ ও দৈনিক পাকিস্তানের সম্পাদক ছিলেন। তিনি একাধারে সাংবাদিকতা, রাজনীতি এবং সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। আবুল কালাম শামসুদ্দীন ১৮৯৭ সালের ৩ নভেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশালে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯১৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর কলকাতার রিপন কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু ওই সময় খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন এবং বিএ পরীক্ষা না দিয়ে কলকাতার গৌড়ীয় সুবর্ণ বিদ্যায়তন থেকে ১৯২১ সালে উপাধি পরীক্ষা পাস করেন। শামসুদ্দীন ১৯২৩ সালে কলকাতার ‘দৈনিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯২৪ সালে কলকাতার সাপ্তাহিক ‘মুসলিম জগত’ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে যোগদান করেন।

ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাঙালি মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ ঘটে, আবুল কালাম শামসুদ্দীন তার অন্যতম ফসল। সাংবাদিকতা, সাহিত্য, সমাজ উন্নয়ন, রাজনীতি, ভাষা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে তিনি বাঙালি মুসলিম নবজাগরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে তিনি আমৃত্যু সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ভাষা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন স্বজাতি ও স্বদেশপ্রেমিক একজন চিন্তাশীল, নিষ্ঠাবান সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তার মতো নিঃস্বার্থ নিবেদিতপ্রাণ মহৎ ব্যক্তি সমাজে নিতান্ত বিরল।

১৯২৫-১৯২৯ সাল পর্যন্ত ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘দ্য মুসলমান’ এর সহকারী সম্পাদক (১৯২৪ থেকে সপ্তাহে তিনবার প্রকাশিত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন প্রতিষ্ঠিত ও সম্পাদিত ‘সওগাত’ (১৯২৬) এর সম্পাদনা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৩৬ সালে দৈনিক আজাদে যোগদান করেন। ১৯৪০-১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে প্রেস ট্রাস্ট অব পাকিস্তান পরিচালিত দৈনিক পাকিস্তানের সম্পাদক নিযুক্ত হন ও ১৯৭২ সালে অবসর নেন। আবুল কালাম শামসুদ্দীন রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

তিনি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯২৭ সালে মুসলিম লীগের সদস্য পদ নেন এবং ১৯৪৬ সালে এ দল থেকে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে তিনি আইন পরিষদের সদস্য পদ ও মুসলিম লীগের সংসদীয় পার্টি ত্যাগ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে নির্মিত শহীদ মিনারটি তিনি উদ্বোধন করেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘পলাশী থেকে পাকিস্তান’ ও ‘অতীত দিনের স্মৃতি’। বাংলা একাডেমি থেকে তার রচনাবলি তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। আবুল কালাম শামসুদ্দীনকে পাকিস্তান সরকার ‘সিতারা-ই-খিদমত’ ও ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি দিলেও ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে খেতাব দুটি বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৭৬ সালে একুশে পদক পান।

Link copied!