শিল্পকলায় ‘বিশ্ব সংগীত দিবস’ পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২১, ২০২৩, ১০:৫৫ পিএম

শিল্পকলায় ‘বিশ্ব সংগীত দিবস’ পালিত

আজ ২১ জুন, বিশ্ব সংগীত দিবস। সংগীত দিবসের সূচনা হয়েছিল ইউরোপে, মুলত ফ্রান্সে। সেখানে এই উৎসবের নাম দেয়া হয় ‍‍`ফেট ডে লা মিউজিক‍‍`। যার অর্থ ‘বিশ্বজুড়ে সঙ্গীতের দিন’। ১৯৮২ সালে বিশেষ এই সংগীত উৎসবের দিনটি ‍‍`ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে‍‍` হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সংগীতের সুরে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ইতিবাচক চিন্তা ও দর্শনকে ছড়িয়ে দিয়ে সবার সাথে মেলবন্ধন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। 
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আজ ২১ জুন ২০২৩ বুধবার বিশ্ব সংগীত দিবস পালিত হয়েছে। বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলার একাডেমির আয়োজনে সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

দিনটি উপলক্ষ্যে আলোচনা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা পর্ব দিয়ে শুরু হয় মুল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন ড. সাইম রানা, তেরা মালেউফ, দেবরাহ্ জান্নাত। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, "প্রতিটি মানুষের অন্তরে রয়েছে সুরের প্রবাহ। রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন গান শুধু গান নয়; এটি একটি উপাসনাও। বিশ্বে এখন মিউজিক থেরাপি ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে বাংলা রাগ সংগীত অন্যতম ভূমিকা রাখছে।"

শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকরাই পৃথিবীকে নান্দনিক রাখতে পারেন উল্লেখ করে বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষ্যে উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে তিনি পরিবেশন করেন ভুপেনহাজারিকার গান-
" মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার"

আলোচনায় বক্তারা বলেন- ‍‍`বিশ্বের বিভিন্ন সংগীতের ভাষাই চেতনাবোধকে ধারণ করতে হবে, যেন প্রত্যেকেই তার নিজের আবেগ প্রকাশ করতে পারেন গানের মাধ্যমে’। ফরাসি লালন গবেষক ও ভক্ত 
দেবরাহ জান্নাত বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে নিজ দেশের স্মৃতিচারন করেন। তিনি বলেন - 

" সংগীত নিজের আত্মার স্পন্দন। ভক্তি না থাকলে, বোধ ও চিন্তার দর্শন না থাকলে সুর তৈরী হয় না।"  সঙ্গীত ও সাধনা সম্পূরক উল্লেখ করে তিনি বলেন - 
‍‍` আদি তাল, আদি লয়  ও গলা পরীক্ষার মাধ্যমে গান তৈরী হয়। কেবল বিশ্ব সঙ্গীতের মাধ্যমে এক তালে, একসুরে একাত্ম হওয়া যায়‍‍`।

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হোন লেবাননের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী তারা মালেউফ। বিশ্ব সংগীত দিবসে বাংলাদেশে এ ধরনের আয়োজন নিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি পরিবেশন করেন বাংলা গান -‍‍` সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তে তুমি‍‍`

পরে ২য় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা: 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই পরিবেশিত হয় সমবেত যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা ‘পূর্ব পশ্চিম’। সংগীত পরিচালক মো: মনিরুজ্জামান এর পরিচালনায় সমবেত যন্ত্রসংগীত পরিবেশিত হয়। ‘আকাশ ভরা সূর্যতারা’ শিরোনামে সমবেত নৃত্য-রবীন্দ্র পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যদল। 

এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেন নকিব খান। 

৫ মিনিটের সমবেত সংগীত (আধুনিক) পরিবেশন করেন- পথিক নবী, শাহনাজ বেলী, অনপমা মুক্তি, রাজিব, কিশোর, সাব্বির জামান, অপু আমান, পুলক অধিকারী, রন্টি দাস, লিজা, বিউটি, নাজু আখন্দ, আয়রুল ওয়াসী, সালমা, সন্দীপন, কানিজ খন্দকার মিতু, নিশিতা বড়ুয়া, সম্রাট, শাপলা পাল, ফারশিদ আলম ও মেহরীন। 
তারপরেই পরিবেশিত হয় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। 

লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায়, সংগীত পরিচালক জাহিদুল কবির লিটন এবং মুহাম্মদ আনিসুর রহমান এর তত্ত্বাবধানে ‘গীত, বাদ্যে লোক দর্শন’ শিরোনামে পরিবেশিত হয় সমবেত লোকসংগীত। 
এর পর পরিবেশিত হয় ওস্তাদ আমজাদ আলী খান- নোবেল পিস প্রাইজ এওয়ার্ড । খুরশিদ আলম পরিবেশন করেন সিনেমার গান ‘বন্দি পাখির মতো’। একক গানে এলিজা পুতুল পরিবেশন করেন লালনগীতি এবং শরীফ সাধু পরিবেশন করেন লোকসংগীত। 

এরপর পরিবেশিত হয় সঙ্গীতের দুই দিকপাল উদয়শঙ্কর এবং ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মরণে ভিডিও চিত্র উপস্থাপনা। 

এরপরে ‘দাও শৌর্য দাও ধৈয্য’ ও ‘আমরা সবাই মঞ্চকুড়ি’ সমবেত সংগীত পরিবেশিত হয় একাডেমির শিশুসংগীত দলের পরিবেশনায়। ‘বিশ্ব বীণা রবে…’ শিরোনামে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে ধৃতি নর্তনালয় । সমবেত নৃত্য পরিচালনা করেন ওয়ার্দা রিহাব।  

সঙ্গীতের আরেক দিকপাল শচীনদেব বর্মন স্মরণে ভিডিওচিত্র উপস্থাপন করা হয়।  

পরে ‘তুমি লাল সবুজের দেশ’ সংগীত পরিবেশন করেন জাপানের শিল্পী মাএ ওয়াতানাবে। ‘শুকনো পাতার নুপুর..’ পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য-নজরুল। নৃত্যটি পরিবেশন করেন একাডেমির শিশুদল। একক সংগীত এর রেকর্ডেড- পরিবেশন করেন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী বব।

বিদেশী ভাষার সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা ‘বিশ্ব মায়ের সুর, ছন্দ, বাণী’ সমবেত পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। এর ভাবনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন জনাব লিয়াকত আলী লাকী। সংগীত পরিবেশনায় ছিলো ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন ইয়াসমিন আলী, নৃত্য পরিবেশনায় ভঙ্গিমা ডান্স থিয়েটার এবং নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন সৈয়দা সায়লা আহমেদ লিমা। 

সবশেষে ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন করে ‘স্পন্দন’ । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নূরুল হাসনাত জিলানী ও তানজিনা তমা।

Link copied!