ব্লুমবার্গের টেকসই তালিকায় বাংলাদেশের ৭ কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ২৮, ২০২৩, ০৯:৪৩ পিএম

ব্লুমবার্গের টেকসই তালিকায় বাংলাদেশের ৭ কোম্পানি

টেকসই ব্যবসার চর্চা গ্রহণে কর্পোরেট বাংলাদেশ বেশ ধীরগতিতে এগিয়ে গেলেও গত কয়েক বছরে সেই চর্চা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারই ফল হিসেবে গত বছরের পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসনমূলক (ইএসজি) কাজের জন্য ব্লুমবার্গ থেকে বেশ ভালো নম্বর পেয়েছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানি। 

এই কোম্পানিগুলো হচ্ছে—গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। সারা বিশ্বের ১৬ হাজারের বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্থান পেয়েছে এই তালিকায়। আন্তর্জাতিক ইকুইটি বাজার মূলধনের ৯৩ শতাংশের বেশি এই কোম্পানিগুলোর দখলে।

তবে অন্যান্য আঞ্চলিক কোম্পানির স্কোরের চেয়ে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর ব্লুমবার্গ ইএসজি স্কোর বেশ কম। শীর্ষ ১০০ ভারতীয় কোম্পানির স্কোর ১০০-র মধ্যে ৫০ থেকে ৭০-এর মধ্যে। অন্যদিকে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর স্কোর ২৩ থেকে ৪০-এর মধ্যে।

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য ইএসজি রেটিং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীই, বিশেষ করে ইউরোপীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন বিনিয়োগের আগে দেখতে চায় নির্দিষ্ট কয়েকটি ইএসজি মানদণ্ড পূরণ করা হয়েছে কি না।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টেকসই ব্যবসার চর্চা শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্যই অপরিহার্য নয়। শত বছর টিকে থাকবে এবং শেয়ারহোল্ডার, অর্থনীতি ও সমাজকে উপকৃত করে যাবে, এমন ব্যবসা গড়ে তোলার জন্যও এ চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি আরও বলেন, তার কোম্পানি দুই দশকেরও বেশি সময় আগে এসব টেকসই চর্চা শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে পরিবেশগত দায়বদ্ধতা এবং কর্মচারী ও স্টেকহোল্ডারদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজেদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছেন তারা।

কে কত ইএসজি স্কোর পেল

বাংলাদেশের বেশ কিছু তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ইএসজির আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রহণ করেছে। নেতৃস্থানীয় আন্তর্জাতিক ইএসজি স্কোরিং প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ বিভিন্ন কোম্পানির আদর্শ টেকসই প্রতিবেদন থেকে প্রাসঙ্গিক, পরিমাপযোগ্য তথ্য নেয় এবং সেগুলোর ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোকে স্কোর দেয়।
ব্লুমবার্গ টার্মিনাল ব্যবহারকারী বিনিয়োগকারীরা এই স্কোর দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

ব্লুমবার্গ ইএসজি ইউনিভার্সে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯.৬ স্কোর পেয়েছে গ্রামীণফোন। তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর উন্নতি করছে।

তামাক বাজারের নেতৃস্থানীয় কোম্পানি বিএটি বাংলাদেশ ৩৫.৪ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় এবং হেয়ারকেয়ার মার্কেটের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশ ৩৪.৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

দেশীয় প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্লুমবার্গ ইএসজি স্কোর ৩৩.১। আর ৩১.১ স্কোর নিয়ে তার পরেই বৃহত্তম নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের অবস্থান।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের স্কোর ২৬, আর ওয়ালটনের স্কোর ২৩.৭।

ভালো চর্চাগুলো

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শোয়েব হোসেন নোবেল বলেন, ওয়ালটন তাদের চীনা ও ভারতীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের আগেই সিএফসি নিঃসরণকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণক পণ্য পর্যায়ক্রমে বাজারে আনা বন্ধ করে দিয়েছে। কোম্পানিটি এখন সৌর শক্তিতে বিনিয়োগ করছে এবং বেশি জ্বালানি খরচ করে এমন পণ্যগুলো পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ও সবুজ কোম্পানিতে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওয়ালটন পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের চর্চা গ্রহণ করেছে।

স্কয়ারের সিএফও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের টেকসই ব্যবসার চর্চা শুরু হয় দুই দশক আগে, কারখানাগুলোকে দূষণমুক্ত করার মাধ্যমে। এরপর তাদের টেকসই চর্চার উপাদান কেবল বেড়েছেই। 

গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হোয়েগ হেনরিকসেন টিবিএসকে বলেন, তাদের কোম্পানির মূল ব্যবসায়িক লক্ষ্যই হচ্ছে সমাজকে শক্তিশালী করা।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের ডিএনএতেই প্রোথিত করে দেওয়া হয়েছে টেকসই ব্যবসার চর্চা। টেকসই চর্চা ও কমপ্লায়েন্স মেনে চলার খরচ আছে, কিন্তু ব্যবসা হিসেবে তা সবসময় যথেষ্ট লাভজনক হয় না। ‍‍`তবু আমরা এমন কোনো ব্যবসায় জড়াই না যা পরিবেশের ক্ষতি করে কিংবা সামাজিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন। সেটা যদি আইনস্মত এবং লাভজনক ব্যবসা হয়, তবু তার সঙ্গে যুক্ত হই না।‍‍`

ব্র্যাক ব্যাংকের টেকসই অর্থায়নের প্রধান তাশমীম মুনতাজির চৌধুরী বলেন, ‍‍`ইএসজি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর একটি এবং ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে।‍‍`

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মো. মাসুদ কে মজুমদার বলেন, ‍‍`আমি মনে করি ইকোসিস্টেমের প্রত্যেকেই যদি ইএসজির সর্বোত্তম চর্চাগুলো মেনে চলে, তাহলে পৃথিবীটা বসবাসের জন্য আরও উপযোগী হয়ে উঠবে।‍‍`

Link copied!