মূল ফটকে তালা পদবঞ্চিতদের, শাটল ট্রেনের চালককে ‘অপহরণ’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১, ২০২২, ১১:৫২ এএম

মূল ফটকে তালা পদবঞ্চিতদের, শাটল ট্রেনের চালককে ‘অপহরণ’

দীর্ঘ তিন বছর পর রোববার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কমিটিতে পদ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। ক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। অভিযোগ উঠেছে শাটলের ড্রাইভারকে অপহরণ করেছেন তারা।

অপহৃত ৩ জন হলেন—গার্ড এমাদুল হক, চালক আবু তাহের ও চালকের সহকারী পুন্য জ্যেত্যি চাকমা।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আজ সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম পুরাতন (বটতলী) স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ১৩১ নম্বর শাটল ট্রেন। ট্রেনটি ঝাউতলা এলাকায় পৌঁছালে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকারে কয়েকজন যুবক এসে ট্রেনের গার্ড, চালক ও তার সহকারীকে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে ওই  রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম বলেন, 'ছাত্রলীগের একটা অংশ যারা পদ পায়নি তারা অবরোধ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ও শিক্ষক বাস আসতে দিচ্ছে না তারা। শাটলের ড্রাইভারকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে ঝাউতলা থেকে। যেহেতু এটা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিষয় আমরা বলতে পারছি না অবরোধ কখন শেষ হবে। তবে আমরা ওদের সাথে কথা বলছি।'

কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদের ৫টি আবাসিক হলের অন্তত ৪০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।

এ সময় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সাহিল কবিরকে মারধর করা হয়। মারধরের শিকার সাহিল পরে চবির চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।

শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, চবির আলাওল হলের অন্তত ১৫টি, এ এফ রহমানের ৫টি, সোহরাওয়ার্দীর ১৫টি, শাহজালালের ৪টি ও শাহ আমানতের ৬টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

দীর্ঘ তিন বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। কিন্তু কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই ক্যাম্পাসজুড়ে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। অছাত্রদের কমিটিতে রাখার অভিযোগ এনে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা।

২০১৯ সালে ১৪ জুলাই রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

চবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আরেকটি পক্ষ সিটির সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী। আর নাছিরের অনুসারী সাধারণ সম্পাদক ইকবাল।

শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের মধ্যে রয়েছে ১১টি উপপক্ষ। এগুলোর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) মহিবুলের অনুসারী। বাকি ৯টি উপপক্ষ—ভার্সিটি এক্সপ্রেস, কনকর্ড, বাংলার মুখ, সিক্সটি নাইন, একাকার, রেড সিগন্যাল, উল্কা, এপিটাফ ও স্বাধীনতা নাছিরের অনুসারী।

রবিবার রাত দুইটায় ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন পদবঞ্চিতরা। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের অনুসারীদের সদ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া মো. ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের মতে ইলিয়াসের মদদেই তাঁরা পদ বঞ্চিত হয়েছেন।

মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রায় শতাধিক নেতা–কর্মী বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় তাঁরা ‘অবৈধ কমিটি, মানিনা মানব না’ ও ‘টাকার বিনিময়ে কমিটি মানিনা মানব না’ বলে স্লোগান দেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এ কমিটির অনুমোদন দেন।

Link copied!