ডাকবাক্স, ডাকঘর, ডাকপিয়ন বা ডাক হরকরা এ শব্দগুলোর ব্যবহার এখন যেন শুধু বইয়ের পাতায়ই সীমাবদ্ধ। আজকের যুগে এ জিনিসগুলোর খুব প্রয়োজন পড়ে না। তবে একসময় মানুষের সাথে এস সম্পর্ক ছিল খুব গভীরে। দিনের পর দিন প্রিয় মানুষের চিঠির অপেক্ষা ছিল সবার মনে। সবার অপেক্ষা থাকতো ডাকপিয়নের জন্য। তবে সবই এখন আধুনিকতার আলোতে পুরাতন স্মৃতিতে ঠাঁই নিয়েছে। প্রতি বছর সেই স্মৃতি একটু তাজা করতেই যেন আসে বিশ্ব ডাক দিবস। ৯ অক্টোবর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় এই দিবসটি।
১৮৬৮ সালে জার্মান ডাক বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জে. হাইনরিখ ফন স্টিফেন সর্বপ্রথম একটি পোস্টাল ইউনিয়ন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং উদ্যোগটি প্রস্তাব আকারে জার্মান সরকারের কাছে প্রেরণ করেন। প্রস্তাবটিতে সাড়া দিয়ে জার্মান সরকার নিজ উদ্যোগে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে ১৮৭৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট ২২টি দেশের ডাক বিভাগকে একত্রিত করে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের শেষ দিন ছিল ৯ অক্টোবর। এদিন প্রতিষ্ঠিত হয় জেনারেল ইউনিয়ন অব পোস্ট। পরবর্তী সময়ে ১৮৭৮ সালে জেনারেল ইউনিয়ন অব পোস্ট পরিবর্তন করে বিশ্ব ডাক সংস্থা করা হয়। এ সংস্থা গঠনের পর যে কোনো রাষ্ট্র থেকে পাঠানো চিঠি অন্য রাষ্ট্র বিনা মাশুলে গ্রহণ করে।
তবে পূর্বে একটি চিঠি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো হলে যতগুলো দেশের ভেতর দিয়ে যেত, সে দেশগুলোর ডাকটিকিট খামে লাগাতে হতো। এতে করে ডাক বিভাগক প্রচুর ভোগান্তির শিকার হত। ১৯৬৯ সালে জাপানের টোকিওতে বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৬তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং এ অধিবেশনে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে জার্মানির হামবুর্গে বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৯তম অধিবেশনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল ইউনিয়ন অর্থাৎ বিশ্ব ডাক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রতি বছর ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে। এ বছরও নানা আয়োজনে বিশ্ব ডাক দিবস উদযাপিত হচ্ছে।