অটোপাসের যুগে ফেল করার হার বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ১২:২৭ পিএম

অটোপাসের যুগে ফেল করার হার বেড়েছে

অটোপাসের যুগে ফেল করার হার বেড়েছে।

এবার উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার মধ্যেই শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পরই কোটা সংস্কার আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে, দফায় দফায় স্থগিত করা হয় পরীক্ষা।

এরপর পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। গত আট আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার এসেই সিদ্ধান্ত নেয় যে, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। এরপরই আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সচিবালয় ঘেরাও করে তারা।

অবশেষে পরীক্ষার্থীদের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয় স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো। সিদ্ধান্ত হয় অটোপাশ দেওয়ার। এটিকে বলা হচ্ছে ম্যাপিং পদ্ধতি। অর্থাৎ যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে, যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি করা হয়।

তবে অটোপাসের ফলে ফলাফল ভালো হবে যারা আশা করেছিলেন, হতাশ হতে হয়েছে তাদের। ফল হয়েছে উল্টো। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার গতবারের তুলনায় কমেছে। পৌনে তিন লাখ শিক্ষার্থী এবার ফেল করেছে।

নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গত বছর পাসের এই হার ছিলো ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

গতবছরের তুলনায় পাশের হার কমেছে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও। তবে সম্মিলিত ১১ বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে সবচেয়ে শীর্ষে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাশের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।

পাশের হার কমলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার হার গতবারের তুলনায় বেড়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন।

৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের জিপিএ–৫ পেয়েছে, এক লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, গতবার এই সংখ্যা ছিলো ৭৮ হাজার ৫২১ জন।

পাসের হার কমলেও এটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফলে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না।

তপন কুমার বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে।

আর জিপিএ–৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলেও মনে করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার।

এবার ফল প্রকাশের ব্যবস্থাপনাতেও ভিন্নতা এসেছে। অন্যান্য সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত জানানো হতো। কিন্তু এবার মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশিত হয়।

এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সব বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতিও।

বোর্ড অনুযায়ী হিসাব

সাধারণ নয় বোর্ডের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হারে সবার উপরে রয়েছে সিলেট এবং সবার নিচে রয়েছে ময়মনসিংহ বোর্ড। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ঢাকা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ, কারিগরি বোর্ডে ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।

চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ পাশ করেছে।

১১ বোর্ডে এবার পরীক্ষায় বসেছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। এদের মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। পাশের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

Link copied!