কর্মক্ষেত্রে অধিকতর প্রতিষ্ঠিত, সফল ও বেশি স্মার্ট নারীদের সাথে প্রেম বা সম্পর্কে জড়াতে পুরুষদের মধ্যে বেশিরভাগ কম আগ্রহ দেখা যায়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে পুরুষরা একই স্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্মজীবী জীবনসঙ্গি বেছে নিলেও তাদের সংখ্যা খুবই কম। তাই বেশি প্রতিষ্ঠিত ও স্মার্ট নারীদের প্রেম বা রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখনও পুরুষদের সঙ্গে অনেকটা আপোস করে চলতে হয়। সফল নারীদের কেন এই অলিখিত আপোসনামা?
এ সমস্যা সমাধানে পুরুষদেরই এগিয়ে আসা উচিত। নারীরা অধিকতর সফল হলেই যে তাদের বিপরীত সঙ্গীদের তাচ্ছিল্য করবে-পুরুষদের এমনটা ভাবা উচিত নয়। পুরুষের এই ধারণা পরিবর্তন হলেই সফল নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে আর বাধা থাকবে না। অন্যদিকে, সফল নারীরাও তাদের সম্পর্ক নিয়ে বিচলিত হয়ে কাজ করতে পারবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক কারা অ্যালাইমোর এক নিবন্ধে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নিবন্ধে কারা অ্যালেইমো বলেন, অনেক নারীকে এখনও বেছে নিতে হচ্ছে কোনটি তারা গ্রহণ করবেন-পেশাগত আকাঙ্খা, নাকি প্রেম ভালবাসার সম্পর্কে সফল হওয়া। এটা অবশ্য নির্ভর করে পুরুষদের অমঙ্গলজনক সাংস্কৃতিক প্রত্যাশার ওপর।
নিবন্ধে বিয়ে ও সম্পর্কে জড়ানো বা ডেট নিয়ে কারা অ্যালাইমো বলেন, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিয়ে ও ডেট বিষয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে দেখা যেতো সফল বা প্রতিষ্ঠিত পুরুষেরা তাদের সেক্রেটারিকে বিয়ে করতেন, তবে এখন তারা সমপর্যায়ের শিক্ষা ও কর্মজীবী নারীদের বিয়ে করছেন। এটাকে বলা হয়ে থাকে যোগ্য মিলন। তবে রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখনও পুরুষদের সাথে নারীদের কম্প্রোমাইজ বা আপোস মেনে চলতে হয়।
তবে সব নারীই যে সম্পর্ক বা বিয়ে করতে চান-এমনটা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অবিবাহিত, ব্রেকআপ হয়ে যাওয়া ও ডিভোসী নারীদের মাত্র ৩৮ ভাগ বিয়ে বা সম্পর্কে জড়াতে চায়। তারা যদি বিয়ে বা সম্পর্কে জড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন এবং পেশাগত দিক দিয়ে সঙ্গীর চেয়ে বেশি সফল ও স্মার্ট হয়ে থাকেন তবে তাদের দুইটির মধ্যে একটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত বেছে নিতে হচ্ছে। তারা কি চায়-রোমান্টিক সফলতা না পেশাগত সফলতা?
সভ্য সমাজের সংস্কৃতির এই কুৎসিত দিকটির পরিবর্তন আনতে চাইলে আমাদের পুরুষত্বের ধারণাগুলোর মৌলিক পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
সমস্যার একটি দিক হলো- অনেক পুরষই কর্মক্ষেত্রে বা যোগ্যতায় তাদের চেয়ে বেশি সফল ও স্মার্ট নারীদের বিয়ে বা তাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে আগ্রহ দেখান না। ২০০৬ সালের একটি ‘স্পিড ডেটিং’ পরীক্ষায় দেখা গেছে, যখন একজন পুরুষ মনে করেন তার চেয়ে তার সঙ্গী বেশি স্মার্ট, তখন তিনি ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে কম আগ্রহী হন। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থীদের ওপর ওই পরীক্ষা চালানো হয়।
অন্যদিকে, চাকরি বা পেশাগত বিষয়ে যেসব নারীদের ঈর্ষণীয় সফলতা রয়েছে তারা এই সফলতাকে বিয়ে বা ডেটিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা বলে মনে করছেন। এ কারণেই হয়ত মার্কিন কলামিস্ট ও লেখক মৌরিন ডাউড তার বইতে লিখেছেন, “পুরুষের প্রয়োজন আছে কি?”
মৌরিন ডউড ওই বইতে আরও দেখিয়েছেন, “পুলিৎজার পুরষ্কার পাওয়া এক নারী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেছিলেন এর জন্য হয়তো সে আর ডেট করতে পারবে না।”
নিউইয়র্কের সাবেক জেলা জজ ও লেখক ফ্রেডারিক ব্লক তার বইতে লিখেছেন, পুলিৎজার পুরষ্কার পাওয়া সোনিয়া সোটোময়ায়র সুপ্রিম কোর্টে তার মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন। এর পেছনে কারণ হলো, সোনিয়া জানতেন এই পুরষ্কার তার আনন্দদায়ক ডেটিং জীবন বিষাদে পরিণত করবে। তবে সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে, সফল পুরুষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা নেই বলে চলে।”
তবে ব্যতিক্রমও আছে। গুটিকয়েক নারী তার চেয়ে কম আয় করা পুরুষকে বিয়ে না করতে চাইতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে,যেসব জায়গায় পুরুষদের সংখ্যার চাইতে নারীরা বেশি সেখানে কম বিয়ে-শাদি হয়ে থাকে।
আদমশুমারির তথ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এমির কামেনিকা ও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিংগাপুরের জেসিক প্যানের গবেষণা রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে।
গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, একজন নারী পরিবারের উপার্জনক্ষম হলে ওই নারী ও তার স্বামীর মধ্যে তীব্র কলহের সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। নারীরা যখন ক্যারিয়ারে ব্যাপক সাফল্যের স্বাদ পান তখন এটি পুরুষদের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্ককে বিপন্ন করতে পারে।
এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যেসব নারী অভিনেত্রী সেরা অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমি পুরষ্কার জিতেছেন তারা সেরা পুরুষ অভিনেতার পুরষ্কার পাওয়াদের তুলনায় ৬৭ ভাগ কম সময়ের জন্য তাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছেন। এমনকি, সরকারি পদে জয়ী হওয়া এক নারীর বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা দ্বিগুণ করে বলে সুইডেনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এটি হতে পারে একারণে যে শীর্ষ নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা খুবই কম।
নারী ও পুরষের এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকৃত পথ হলো-আমরা বুঝতে চেষ্টা করতে হবে নারীরা কার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই চিন্তাধারা সঠিক কিনা? পুরুষদের ভিন্ন আচরণ না দেখে তাদের পুরুষত্ব ও শক্তি সম্পর্কে আমাদের সাংস্কৃতিক আবহ পরিবর্তন করাও দরকার। তাহলেই নারী ও পুরুষের রোমান্টিক সম্পর্কের দূরত্ব বাড়বে না। আর সফল নারীদের সঙ্গে ডেটিংয়েও আগ্রহ বাড়বে পুরুষদের।
সূত্র: লেখক- কারা অ্যালেইমো, সহযোগি অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র। লেখাটি প্রথম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত হয়। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মিজানুর রহমান খান।