ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে: বিএনপির জাহিদ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ০২:৪১ পিএম

ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে: বিএনপির জাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ‘নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন।

শুক্রবার সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালযসমূহের মধ্যে ছাত্র সংসদের যে নির্বাচন হচ্ছে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”

তিনি বলেন, “গতকালকে যে জাকসু নির্বাচন হয়েছে সেখানে শুধু ছাত্রদলের কথা কেন বলেন, সেখানে বিভিন্ন প্যানেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইভেন শিক্ষকরা পর্যন্ত নির্বাচন থেকে অনেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। নিশ্চয়ই সেখানে কোনো না কোনো কারণ আছে।

“কাজেই আমার বক্তব্য থাকবে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। দেশের মানুষ ২০০৯ এ ভোট দিতে পারে। ২০১৪ তে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮তে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, ২০২৪ এ আমি-ডামি নির্বাচন হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনি ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে চায়।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

নির্বাচন আয়োজনকারী সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আহ্বান রেখে বলেছেন, এমন কোনো নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বা মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হবে অথবা নির্বাচন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সরে যাবে।

ডাকসু নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম এবং জাকসুতে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জাহিদ।

ডাকসুতে সবকটি হলের ভোটাররা কেন্দ্রীয় ভিপি ও জিএস পদে শিবিরের দুই প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে দিয়েছেন। এবার ভিপি ও জিএসসহ ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে নয়টি জিতে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর এই সহযোগী সংগঠনটি। বিশেষ করে মেয়েদের হলগুলোতে শিবিরের প্রার্থীরা পেয়েছেন নজিরবিহীন সমর্থন।

ভোটের লড়াইয়ে শিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরা। তবে কোনো পদেই তারা জয়ের মুখ দেখেননি। সম্পাদকীয় যে তিনটি পদ শিবিরের হাতছাড়া হয়েছে সেগুলোতে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

আর জাকসুতে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী।

তিনি বলেন, “ভোটকেন্দ্র মনিটর করার জন্য জামায়াত নেতার কোম্পানি থেকে টেলিকাস্টসহ ভিডিও ক্যামেরা সাপ্লাই দিয়ে সিসি টিভির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো ভোটকেন্দ্র শিবিরকে মনিটর করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”

ভোট বর্জনের পর রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল।

‘বিভক্তিতে স্বৈরাচার ফেরার পথ সুগম হবে’

জাহিদ হোসেন বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোন বিভেদ-বিভাজন আপনাকে আমাকে শক্তিশালী করবে না। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকলেই তাহলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে… স্বৈরাচার ফেরত আসার পথ সুগম হবে না।

‘‘কিন্তু কেউ যদি স্বৈরাচারকে পুনর্বাসিত করতে চান তাহলে এই ধরনের প্রহসনমূলক ব্যবস্থার আয়োজন করবেন যেটি সত্যিকার অর্থে শেষ বিচারে ভালো বলে পরিগণিত হবে না।”

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাহিদ হোসেন।

“গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করেছেন তারা কোন অবস্থাতেই বিভাজনের রাজনীতিতে যাবেন না। ঐক্যের রাজনীতিতে আসুন। জনগণের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। জনগণের উপর দায়িত্ব দিন।

‘‘যারা এই সকল প্রক্রিয়া (নির্বাচন প্রক্রিয়া) সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে বলব, বামেও যাবেন না, ডানেও যাবে না…মধ্যবর্তী অবস্থা অবলম্বন করুন এবং ভোটারদের সাথে জনগণের সাথে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলুন। কোনদিকে হেলে পড়ার দরকার নেই। আপনি আপনার নিরপেক্ষতা দিয়েই প্রমাণ করবেন এবং আগামী দিনের ভবিষ্যৎ স্বীকৃতি দিবে আপনার অবস্থান কি ছিল। আমরা আর এ ধরনের কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে, সেই নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা শিক্ষকরা সরে দাঁড়াবে এটা গ্রহনযোগ্য নয়।”

‘নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে’

জাহিদ হোসেন বলেন, “আপনারা লক্ষ্য করছেন, ইদানিংকালে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বিপদগামী করার জন্য, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে প্রলম্বিত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র দেশ এবং বিদেশ থেকে হচ্ছে। এখানে পলায়নকৃত স্বৈরাচার অথবা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি আজকে তারা তলে তলে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, আতাঁত করছে যাতে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত হতে না পারে।

“আজকে পলায়নকৃত স্বৈরাচার এবং দেশবিরোধী শক্তির ঐক্য সেটি যদি আমাদের রুখতে হয় তাহলে মনে রাখতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে এবং গণতন্ত্রকামী মানুষকে সাথে নিয়ে আজকে আমাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “সারা পৃথিবীতে দেখা গেছে, যখনই কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাক আসছে, যখনই কোনো স্বৈরাচারের উদ্ভব হয়েছে জনগণই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিগত ৩৬ জুলাই জনগণই সিদ্ধান্ত নিয়েছে… ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল সেই আন্দোলন এক দফার আন্দোলনের রূপ লাভ করেছে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই।”

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে রাষ্ট্র সংস্কারের চলমান সংস্কার কাজ নিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “আজকেও যারা দেশের গণতন্ত্রকে পিছিয়ে দেওয়ার, গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করার অপচেষ্টা করছে দেশে এবং বিদেশে বসে তাদের হীন চেষ্টা জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপর এবং সচেতনতার উপর কোনদিনই স্থান পাবে না। শেষ বিচারে জনগণের জয় হবে, জয় হবে গণতন্ত্রের, জয় হবে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের। জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে আগামী দিনের সংবিধান কী হবে, আগামী দিনের সংস্কার কী ধরনের হওয়া উচিত… জনগণ যাদেরকেই নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাবে তারাই ৩৬ জুলাইয়ের যে আদর্শ এবং উদ্দেশ্য সর্বোপরি এদেশের মানুষের আকাংখার উপরে ভিত্তি করেই আগামী দিনে সংসদে সংস্কার হবে।

“সেই সংস্কারের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ভবিষ্যৎমুখী বাংলাদেশ অর্থাৎ আগামীর বাংলাদেশ ৩১ দফার আলোকে বিনির্মাণে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান নেতৃত্ব দিবেন।”

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিইএব) আহ্বায়ক মো. হানিফ ও সদস্য সচিব কাজী শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

পরে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতারা সেখানে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শপথ বাক্য পাঠ করেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকৌশলী মো. হানিফের নেতৃত্বে ৩৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়।

Link copied!